মিয়ানমারে সংঘাত, বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফের পাশাপাশি উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়িতেও আতঙ্ক
মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। চার মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপেই দুপক্ষের লড়াই-সংঘাত সীমাবদ্ধ ছিল। এতে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসত টেকনাফের সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়নে।
তবে দুদিন ধরে কক্সবাজারের উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের কাছেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার ওপারে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে।
তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা থেকে রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় কিছুক্ষণ পরপর মর্টার শেল, গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে। এতে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল চারটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত দুপক্ষের সংঘাত চলমান রয়েছে।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা রফিক মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে সীমান্তের ওপার থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। ওপার থেকে কিছু গুলিও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে। এতে এলাকার মানুষ প্রাণহানির শঙ্কায় নাফ নদীসংলগ্ন মৎস্যখামার ও ফসলি জমিতে যেতে পারছেন না।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকার কৃষক হামিদুল হক বলেন, গত জানুয়ারিতে প্রথম ঘুমধুমের বিপরীতে থাকা রাখাইন রাজ্যে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছিল। তখন গোলাগুলির শব্দে ঘুমধুম সীমান্তের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়। সীমান্তের ৮-১০টি চৌকি আরাকান আর্মি দখল করে নেওয়ার পর প্রায় আট মাস ঘুমধুমের মানুষ ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শুনতে পাননি। কিন্তু গতকাল দুপুর থেকে আবারও থেমে থেমে মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাঁদের ধারণা, আরাকান আর্মির দখলে নেওয়া সীমান্তচৌকিগুলো পুনরুদ্ধারে হামলা চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পালংখালী সীমান্তের ওপারে ভারী গোলা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, কয়েক দিন বিস্ফোরণের শব্দ না থাকায় তাঁর এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তিতে ছিলেন। তবে গতকাল থেকে আবারও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুরু হয়েছে, যা এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সীমান্তসংলগ্ন অন্তত ২৩টি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। বিস্ফোরণের শব্দে ভূকম্পনে ঘরবাড়ির দেয়ালে ফাটল ধরছে। বিশেষ করে, নারী-শিশু ও বয়স্কদের খুবই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে গত সোমবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন মিয়ানমারের চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ৫৬ জন নাগরিক। বর্তমানে তাঁরা উখিয়ার কুতুপালংয়ে হিন্দুদের জন্য সংরক্ষিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন। এর আগে কয়েক দফায় আরও ৬৮ জন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাঁদেরও উখিয়ার কুতুপালংয়ের ওই আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন এলাকায় রাখা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসনিম বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।