অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন ৩১৫ চরমপন্থী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৭ জেলার ৩১৫ জন চরমপন্থী। আজ রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সংগঠনগুলো হলো পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ)। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও বগুড়া জেলার ৩১৫ জন চরমপন্থী ২১৬টি অস্ত্র জমা দেন।
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, র্যাব-১২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং আত্মসমর্পণকারী কয়েকজন বক্তব্য দেন। এ সময় সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে র্যাবের কার্যক্রম দেশ-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে। ‘উদয়ের পথে’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে চরমপন্থী পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে র্যাব সফলতা দেখিয়েছে। একসময় এই সাত জেলা চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য ছিল। প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, গুম, খুন, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটত। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থী দলের শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সদস্য। এরপর ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় পুলিশের কাছে ৫৯৬ জন চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।
মন্ত্রী বলেন, আজ যাঁরা র্যাবের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা বিশেষ পর্যালোচনা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যাঁরাই আত্মসমর্পণ করবেন, সবাইকে সরকারের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এখনো যাঁরা আত্মসমর্পণ না করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন, তাঁরা বিপদগ্রস্ত হবেন। আপনারা চর এলাকাসহ যেখানেই অবস্থান করেন না কেন, র্যাব আপনাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। কারণ, র্যাব এখন অনেক প্রশিক্ষিত, অনেক আধুনিক।’
আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী দলের নেতা রাজু আহমেদ (সিরাজগঞ্জ) বলেন, ‘পথভ্রষ্ট হয়ে এত দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেছি। আমাদের পুনর্বাসন করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমাদানের উদ্যোগে আমরা রাজি হয়েছি। শ্রমিকের কাজ করে হলেও আমরা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সেখানে আমাদের জড়ানো হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, সেগুলো থেকে মুক্তি চাই।’
চরমপন্থী দলের নেতা রুজবেল (টাঙ্গাইল) বলেন, ‘ফেরারি জীবন আর ভালো লাগে না। আদর্শের নামে এত দিন আমরা ভুল পথে ছিলাম। অন্ধকারের পথ থেকে আমরা আলোর পথে ফিরতে চাই।’
র্যাব-১২-এর অধিনায়ক মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চরমপন্থী দলের নেতা ও সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ভুল পথ থেকে তাঁরা মূলধারায় ফিরে আসতে চান। দেশগঠনে ভূমিকা রাখতে চান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাবের উদ্যোগ এই চরমপন্থী সদস্যরা আত্মসমর্পণ করলেন এবং দুই শতাধিক অস্ত্র জমা দিলেন। এতে ওই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে বলে র্যাব মনে করে।