কেবল শীতে নয়, গ্রীষ্মেও কাপ্তাই হ্রদে বসে পাখির মেলা
হ্রদের পানির ওপর জেগে থাকা গাছের ডাল বা বাঁশের খুঁটির ওপর কয়েকটি পানকৌড়ি যেন ধ্যান করছে। পাশের অগভীর পানিতে বক আর শামুকখোলের মেলা। অদূরে জেগে ওঠা চরে বেশ কিছু গাঙচিল ভীষণ ব্যস্ত হয়ে ক্ষণে ক্ষণে ওড়াল দিচ্ছে। শান্ত নীল জলের হ্রদের এই এলাকায় এলেই শোনা যায় পাখির বিচিত্র ডাক।
রাঙামাটি শহরের চেঙ্গীমুখ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে গেলে এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে। হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অগভীর পানিতে দেখা মিলছে শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ ও জলজ প্রাণীর। আর এসব খাবারের সন্ধানেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে পাখিরা। কাপ্তাই হ্রদের জেগে ওঠা ছোট ছোট চরে এখন এসব পাখির মেলা বসেছে।
সম্প্রতি হ্রদের চেঙ্গীমুখ ও কাট্টলী বিলে গিয়ে নানা প্রজাতির দেশি জলজ পাখির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে হ্রদের ছোট ছোট জনবিরল দ্বীপ ও চরে গাঙচিল, হট্টিটিসহ বেশ কিছু পাখি বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। প্রজনন মৌসুম হওয়ায় এখন এসব পাখি আসছে হ্রদের ঝোপঝাড়ে ডিম পাড়তে। এ ছাড়া হ্রদের বিশাল এলাকাজুড়ে বিচরণ করতে দেখা গেল বক, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছোট ডুবুরি, বড় ডুবুরি, বেগুনি বক, লালঠেঙ্গি ও চ্যাগা পাখিদের।
গ্রীষ্মের এই সময়টায় হ্রদের পানির রং থাকে ঘন নীল। শান্ত হ্রদের বুকে যাত্রীবাহী লঞ্চ আর ট্রলারের যান্ত্রিক শব্দের মধ্যেও পাখিদের কলতান শোনা যায় কান পাতলে। নীল জলে কালো ডুবুরি পাখির ডুব দিয়ে ওঠার দৃশ্য দেখে পর্যটকেরা বরাবরই মুগ্ধ হন। বলা যায়, এসব পাখি হ্রদের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রীষ্ম ছাড়াও প্রতি শীতে কাপ্তাই হ্রদে সাইবেরিয়া ও হিমালয় এলাকা থেকে ছুটে আসে পরিযায়ী পাখিরা। শীতে বেশি দেখা যায় চখাচখি, রাজমণি হাঁস, বালিহাঁস, টিকি হাঁস, সরালিসহ বেশ কয়েক জাতের পাখি।
কাপ্তাই হ্রদে পাখি শিকার না করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মো. আবুল ফজল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে এখন প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে পাখির মেলা বসছে। আমরা পাখিদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কাজ করছি। শুধু কাপ্তাই হ্রদে নয়, যেখানে পাখিরা বিচরণ করে, সেখানে স্থানী লোকজনকে সচেতন করতে কাজ করছি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, সারা বছর কাপ্তাই হ্রদে পাখিরা আসছে, এটা সুখবর। তারা নিরাপদ ও খালি দ্বীপ কিংবা মাঠে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে খাবারের খোঁজে পাখিরা আসে। তাদের যদি কেউ বিরক্ত না করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে বন বিভাগকে।