টাঙ্গাইলে প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে জানানো হয়নি
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহারকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে তাঁর নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগামীকাল শনিবার এই আয়োজনে অতিথি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। তবে সংবর্ধনার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাককে।
আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীরা জানিয়েছেন, দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের না জানিয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
স্থানীয় নেতারা জানান, আব্দুর রাজ্জাক ২০০১ সাল থেকে টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দুবার মন্ত্রীও হয়েছেন। তবে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাননি। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর থেকেই মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজ্জাকবিরোধী নেতারা চাঙা হয়ে ওঠেন। তাঁরা শামসুন নাহারকে সামনে রেখে এলাকায় রাজ্জাকবিরোধী একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবেই কাল বেলা ৩টায় ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে শামসুন নাহারের গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এই সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে এই অংশের নেতা-কর্মীরা বড় ধরনের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
৮ জুন বেলা ৩টায় ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে শামসুন নাহারের গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এই সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিরোধী নেতা-কর্মীরা বড় ধরনের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক ও শামসুন নাহারের বাড়ি। আব্দুর রাজ্জাক ২০০১ সাল থেকে টানা সংসদ সদস্য ও দুবার মন্ত্রী থাকায় নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলাতেই দলের ওপর তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান ওরফে আবু দলীয় মনোনয়ন চান। এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। মনোনয়ন না পেয়ে ছরোয়ার আলম খান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি। তবে তিনি গত ৮ মে প্রধম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। এ নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেন। ভোটে নির্বাচনে ইয়াকুব আলী বিজয়ী হন। তবে ধনবাড়ীতে আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিত প্রার্থী হেরে যান।
ধনবাড়ী উপজেলায় আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান পদে হারুনার রশিদ ওরফে হীরাকে প্রার্থী করেন। হীরা আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার ওরফে সবুজ। এ নির্বাচনে ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলামসহ আরও তিনজন আওয়ামী লীগের নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা সবাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরোধী।
আগামীকালের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা সম্পর্কে সদ্য বিদায়ী ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি হারুনার রশিদ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো গঠিত হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই সদস্য দিয়ে চলছে ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ। তাঁরা দুজন উপজেলা আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে এ সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। হারুনার রশিদ অভিযোগ করেন, সংবর্ধনার নামে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শামসুন নাহার ধনবাড়ীর কৃতী সন্তান। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কেউ খুশি হয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কিছু দিলে সেটাকে কি চাঁদাবাজি বলা যাবে?
ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে রনি বলেন, গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান যাতে সফল না হয়, সে জন্য আব্দুর রাজ্জাকের লোকজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন।
প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনায় যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শামসুন নাহার কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। তাঁর সংবর্ধনায় আমাকে অতিথি করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওই সভায় আমার না যাওয়ার কোনো কারণ নাই।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে সংবর্ধনা সভায় অতিথি না করা প্রসঙ্গে জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘ওনারা দুজনেই কেন্দ্রীয় নেতা। ওনারাই সেটা জানেন।’