ঘাট ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে মিলনকে গুলি করে হত্যা
খুলনার ফুলতলা উপজেলার সিকিরহাট ও রানাগাতি নদীর ঘাট ইজারা নিতে চেয়েছিলেন মিলন ফকির (৪৫)। দরপত্রও কিনেছিলেন। আজ সোমবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে ওই দরপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। ওই ঘাট ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই মিলনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ফুলতলা বাজারের কাছে ফুলতলা-জামিরা সড়কের আলকা এলাকায় আইডিয়াল স্কুল মোড়ে মিলন ফকিরকে বুকে ও মাথায় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর বাড়ি নড়াইলের কালিয়া থানার পেড়লী গ্রামে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ফুলতলার আলকা গ্রামে।
ওই হত্যার ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। কেন ওই হত্যাকাণ্ড, সে ব্যাপারে কোনো কথাও বলতে রাজি হননি ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কী কারণে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।’ সকালে লাশ উদ্ধার করা হলেও দুপুরের পর ময়নাতদন্তের জন্য তা খুলনা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, সকালের দিকে জামিরা রোডের আইডিয়াল স্কুল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিলন ফকির। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন দুর্বৃত্ত এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় মিলন ফকির দৌড়ে স্থানীয় একটি দোকানে ঢুকে পড়েন। দুর্বৃত্তরা ওই দোকানে ঢুকে তাঁর মাথায় ও বুকে আবারও গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান মিলন।
নিহত মিলন ফকিরের পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে ৫–৭ বছর আগে দেশে ফেরেন মিলন। দেশে এসে ফুলতলা বাজারে ব্যবসা শুরু করেন। পরে আলকা গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করছিলেন। ২০২১ সালে ফুলতলা বাজার বণিক কল্যাণ সোসাইটির সহসভাপতি পদে নির্বাচনও করেন তিনি।
মিলন ফকিরের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের বয়স ১৯ বছর। তাঁকেও বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার সময় বড় ছেলেকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ঢাকার গাড়িতে তুলে দিতে এসেছিলেন। ছেলেকে গাড়িতে তুলে দিয়ে ওই মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করল।
মিলন ফকিরের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, সিকিরহাট ও রানাগাতির ঘাট নিয়ে সাবেক এক ইউপি সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মিলন। গতকাল রোববার দুপুরে ওই ইউপি সদস্য তাঁকে (মিলন) একটি বড় মোরগ কিনে দিয়ে ঘাট ইজারার দরপত্র জমা না দিতে অনুরোধ করেন। এরপর সকালেই দুর্বৃত্তরা মিলনকে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ইউপি সদস্যকে থানায় আটকে রেখে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।