মারমুখী ‘মাস্তান’ ও শান্ত ‘বাবু’কে দেখতে এলাকাবাসীর ভিড়
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘মাস্তান’। মারমুখী আচরণের কারণে এমন নাম পেয়েছে গরুটি। মাস্তানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। তার কালো শরীরে সাদা রঙের ছাপ নজর কাড়ে। প্রায় ৩৮ মণ ওজনের গরুটিকে লালন-পালন করেছেন সুন্দলী ইউনিয়নের ডাঙ্গা মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক মনোরঞ্জন পাঁড়ে।
মাস্তান ছাড়াও মনোরঞ্জনের আরেকটি ষাঁড় আছে। সেটির নাম ‘বাবু’। কিছুটা শান্ত স্বভাবের বলে তাঁর নাম রাখা হয়েছে ‘বাবু’। তার সোনালি শরীরে কালো ছাপ। বাবুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কোরবানির ঈদকে রেখে ক্রেতাদের কাছে মাস্তানের ১০ লাখ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি। আর বাবুর দাম ছয় লাখ টাকা। মাস্তানকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায়ই লোকজন আসছে।
মনোরঞ্জন পাঁড়ের গোয়ালে বর্তমানে ছয়টি গরু আছে। এর মধ্যে দুইটি গাভি, একটি বকনা ও একটি এঁড়ে বাছুর এবং আছে মাস্তান ও বাবু।
মনোরঞ্জন জানান, ২০ বছর আগে গ্রামের এক কৃষকের কাছ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় লক্ষ্মীকে কেনা হয়। এরপর সে ১১টি বাচ্চা প্রসব করে। এর মধ্যে দশটি এঁড়ে এবং একটা বকনা। বকনার নাম আদুরি। আদুরি চারটি বাচ্চা দিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি এঁড়ে বাছুর বিক্রি করা হয়। মাস্তান ও বাবুকে তৈরি করা হয়েছে এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য। এর মধ্যে মাস্তান প্রায় ১১ ফুট লম্বা এবং ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার। বাবু প্রায় ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ওজন ৯০০ কেজির মতো।
মনোরঞ্জন আরও জানান, মাস্তানের ওজন করা হয়নি। তবে ঢাকা থেকে আসা লোকজন হিসাবনিকাশ করে আমাদের জানিয়েছেন, তার ওজন ৩৮ মণের বেশি। মাস্তান ও বাবু যথাক্রমে ১০ ও ৬ লাখ করে ১৬ লাখ টাকা দাম চাইছেন মনোরঞ্জন পাঁড়ে।
মনোরঞ্জন পাড়ে বলেন, ‘মাস্তান ছোট বেলা থেকেই বেশ উচ্ছৃঙ্খল। গোয়ালের অন্য গরুগুলিকে কিছুটা বিরক্ত করে এবং অন্যদের খাবার জোর করে খেতে খুবই ওস্তাদ। তাই ওর নাম রেখেছি মাস্তান। আর ছোট বেলা থেকে বাবু একেবারই শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। তাই ওর নাম রেখেছি বাবু। এবার কোরবানিতে বিক্রির জন্য ওদেরকে প্রস্তুত করেছি।’
পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো গরুগুলোর সার্বক্ষণিক যত্ন নেন মনোরঞ্জন পাঁড়ের ছেলে অনিক পাঁড়ে (২৩)। অনিক পাঁড়ে বলেন, ‘ফ্রিজিয়ান জাতের মাস্তানের বয়স সাড়ে চার এবং বাবুর বয়স তিন বছর। একেবারই প্রাকৃতিক পরিবেশে মাস্তান ও বাবুকে আদর-যত্নে লালন–পালন করেছি। ওদের কাঁচা ঘাস, খইল, ভূষি, খুদের ভাত, ভুট্টার গুঁড়া ও খড় খাইয়ে বড় করেছি। কোনো ফিড খাওয়ানো হয়নি কিংবা মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন দেওয়া হয়নি।’
স্থানীয় পশুচিকিৎসক হিরণ্ময় সরকার বলেন, এই গরুর কৃত্রিম প্রজনন থেকে শুরু করে সবকিছুই দেখভাল করি। পরিবারের লোকজন মাস্তান ও বাবুকে সন্তানের মতো লালন পালন করে। চব্বিশ ঘণ্টা ফ্যানের নিচে থাকে গরুগুলো। দিনে চার-পাঁচবার গোসল করায়, খাবার খায় অরগানিক। কোরবানি ঈদের জন্য এই গরুর মাংস সম্পূর্ণ নিরাপদ।
চারদিকে খবর ছড়িয়েছে এলাকার সবচেয়ে বড় ষাঁড় মাস্তান। এ জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসে ষাঁড়টি দেখার জন্য। ষাঁড়টি দেখতে এসেছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার তপনভাগ গ্রামের জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘খবরটি শুনে আমিও মাস্তানকে দেখতে এসেছি। এত বড় গরু এর আগে আমি দেখিনি।’
অভয়নগর উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা আবুজর সিদ্দিকী বলেন, ‘কিছুদিন আগে ওই এলাকায় গিয়ে ষাঁড়গুলো দেখে এসেছিলাম। তখন মাস্তানের ওজন ছিল এক হাজার ২৫০ কেজি। এখন ওজন অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। প্রাকৃতিকভাবে বড় করে তোলা গরুগুলো বেশ স্বাস্থ্যবান। এবার ঈদে ষাঁড় দুটির দামও বেশি পাবেন।’