মা–বাবা দুজনই ডুবেছেন, দুই শিশু ভাইকে নিয়ে লড়ছে কিশোর দীপন

মাসির কোলে মা–বাবা হারানো শিশু দীপু। তিন বছরের এই শিশুর সঙ্গে ১৩ বছরের আরেক ছোট ভাই রয়েছে দীপনের। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে
ছবি: রাজিউর রহমান

‘মায়ের লাশ পেয়েছি, দাহ-শ্রাদ্ধও করেছি। কিন্তু পাঁচ দিনেও বাবার খোঁজ পেলাম না। মা–বাবা দুজনই নেই, এখন আমি এই ছোট ভাই দুটোকে নিয়ে কী করব? কীভাবে চলবে আমাদের পড়ালেখার খরচ?’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে এসে এই প্রতিবেদককে এভাবেই কথাগুলো বলছিল কিশোর দীপন চন্দ্র বর্মণ (১৭)। নৌকাডুবিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ অর্থসহায়তা নিতে এসেছিল সে।

আরও পড়ুন

দীপন চন্দ্র বর্মণের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডোবা-ছত্রশিকারপুর এলাকায়। ১৩ বছর ও ৩ বছর বয়সী আরও দুটি ভাই রয়েছে দীপনের। বাবা ভূপেন্দ্র নাথ বর্মণ মানুষের বাড়িতে বাঁশের বেড়া তৈরির কাজ করে সংসার চালাতেন।

মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত রোববার দীপনের মা–বাবা ও তিন বছর বয়সী ছোট ভাই অন্যদের সঙ্গে করতোয়া নদী পার হচ্ছিলেন। মাঝনদীতে নৌকাডুবিতে তলিয়ে যান তাঁরা। ঘটনার পর শিশু দীপু উদ্ধার হলেও তলিয়ে যান মা–বাবা। ঘটনার পরদিন মা রুপালি রানীর (৩৬) লাশ উদ্ধার হলেও এখনো নিখোঁজ বাবা ভূপেন্দ্র নাথ বর্মণ (৪০)।

দীপন চন্দ্র বর্মণ স্থানীয় মাড়েয়া জংলিপীর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ছোট ভাই পরিতোষ চন্দ্র বর্মণ একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বাবার আয় দিয়েই পড়াশোনার খরচ চলত দুই ভাইয়ের।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মা–বাবা হারানো দীপনের ছোট ভাই দীপুকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন মাসি সনেকা রানী (৩৯)। তিনি বলেন, ‘ছেলে তিনটার দিকে তাকালেই কান্নায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এই বয়সের তিনটা ছেলে মা–বাবা ছাড়া কীভাবে মানুষ হবে ভেবে পাই না। বিশেষ করে এই ছোট্ট শিশুটার কী হবে?’

আরও পড়ুন

দীপনের ছোট ভাই পরিতোষ চন্দ্র বর্মণ (১৩) বলে, ‘মাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। কিন্তু বাবা বেঁচে আছেন কি না, জানি না। এখনো যদি বাবাকে জীবিত পাই, তাহলে অন্তত আমরা পড়াশোনা করতে পারব।’

রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। ঘাট থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন।