স্থানীয় আ.লীগের কোনো নেতাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি

আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন গতকাল যুক্তরাজ্য সফর শেষে সিলেট নগরে শোডাউন দেন
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কাউকে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।  

যুক্তরাজ্যে ১২ দিনের সফর শেষে আজ সোমবার বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন। তাঁকে বিমানবন্দরে বরণ করতে গিয়েই দলের জেলা ও মহানগরের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা স্থানীয় কোনো নেতাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জনের মধ্যে জাকিরও একজন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অতীতে কোনো ধরনের আলোচনায় না থাকা সত্ত্বেও গত জানুয়ারি মাসে হঠাৎ করে চাউর হয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ সংবাদে বিমর্ষ হন আগে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৯ জন। তবে কিছুদিনের মধ্যে এ সংবাদের ধাক্কা কাটিয়ে স্থানীয় প্রার্থীরাও মনোনয়ন চেয়ে শহরে পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার সাঁটান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় এক নেতা বলেন, প্রবাসী নাকি দেশি প্রার্থী, এমন আলোচনা এখন সিলেট নগরজুড়ে চলছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা থাকলেও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। অন্যদিকে আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পৃথকভাবে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালালেও সম্প্রতি এককাট্টা হয়েছেন। স্থানীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দাবি, হুট করে আসা প্রবাসী কোনো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে স্থানীয়ভাবে মহানগরের রাজনীতিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত কাউকে দেওয়া হোক।

আজ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে বিমানবন্দরে বরণ করতে গিয়ে সেখানে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। এ সময় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও মহানগরের সহসভাপতি আবদুল খালিকও উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করি, মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত, তাঁদেরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল্যায়ন করবেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো নির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পরে মো. জাকির হোসেনকে নিয়ে একটি গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে।

সেখানে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তাঁর পক্ষে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন করবেন। ত্যাগ ও সততার সঙ্গে যিনি মহানগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে সুখে-দুঃখে কাজ করেছেন, তাঁকেই দলীয় সভানেত্রী মূল্যায়ন করবেন বলেও বক্তব্যে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা যাঁরা মনোনয়নপত্র কিনেছি, তাঁদের মধ্য
থেকে যিনি আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেবেন। তাঁর পক্ষেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে নৌকার বিজয় উপহার দেবে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। এর বাইরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম রয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।