হয়রানি করতে মামলা করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘এখন অনেক মামলা হচ্ছে, তাতে অনেক নিরপরাধ লোকদের আসামি করা হচ্ছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, কারও বিরুদ্ধে হয়রানি করতে মামলা দায়ের করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল পুলিশ লাইনসে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে তিনি বরিশাল বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন।
এ সময় বরিশাল থেকে একজন পুলিশের কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়া এবং ২৪ ঘণ্টায় তাঁর খোঁজ না পাওয়ার বিষয় তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করা হয়, ২৪ ঘণ্টায় আসামিকে আদালতে হাজির করার বিধানটি কি রহিত করা হয়েছে? জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিধানটি আছে।’ এ সময় পাশে উপস্থিত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেন, কাউকে আটকের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরে করার বিধান আছে। তবে আটক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার আগে গন্তব্যে নেওয়ার সময়টুকু এই ২৪ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে কাউন্ট হবে না। ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে আদালতে তোলা হয়েছে।
বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের কোথাও নীরব চাঁদাবাজি হলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তা আইজিপির নজরে আনার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন অনেক কেস হচ্ছে, তাতে অনেক নিরপরাধ লোককে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাহিনীর প্রধানদের বলছি, যারা এ ধরনের কেস করছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেওয়ার জন্য। যদি এ ধরনের কেস হয়, তাহলে বাদীকেও যেন অ্যাকশনের আওতায় নেওয়া হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এ ধরনের একটি সার্কুলারও দিয়েছি, যাতে এ ধরনের মামলা না নেওয়া হয়।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম ভারতীয় সাংবাদিকদের সমালোচনা করে বলেন, চট্টগ্রামকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকেরা মিথ্যাচার করছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যে যে আস্থার সংকট ছিল, তা কাটিয়ে উঠছেন মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী আগের চেয়ে ইম্প্রুভ হচ্ছে, তবে পুরোপুরি হতে সময় লাগবে। আমি কিন্তু এসেছি তিন মাস হয়েছে। আমার কাছে এ রকম কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে বলব হয়ে যাক, আর হয়ে যাবে। এ জন্য সময় লাগবে, সময় দিতে হবে।’ এ সময় মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আজ সড়কপথে দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পরে পুলিশ লাইনসে গেলে সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল আজিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আইজিপি ময়নুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানসহ মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘বরিশালের শস্যভান্ডারের খ্যাতি ফিরিয়ে আনুন’
বিকেল পৌনে চারটায় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম নগরের কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিভাগীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বরিশাল একসময় ছিল শস্যভান্ডার, কিন্তু এবার আমি বরিশালে এসে হতাশ হয়েছি। রংপুর, রাজশাহী অঞ্চলে এখন কৃষি এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। এবার রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে বোরো ধান ভালো হয়েছে।’ তিনি বলেন, কৃষি বিভাগে দেশের সবচেয়ে বেশি ডক্টরেট ডিগ্রিধারী কর্মকর্তা, অসংখ্য ক্যাডার কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁরা কেউ মাঠে যেতে চান না। প্রকল্প চান, গাড়ি চান, ভালো পোস্টিং চান। কৃষি বিভাগে এমন অনেক প্রকল্প আগের সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছে, যা কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। অনেক জায়গায় রাস্তা বানানো হয়েছে। এতে কৃষির কী লাভ হবে? প্রকল্পের নামে এই দেওয়া-নেওয়ার অভ্যাস বদলাতে হবে।’
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন কোনো দলীয় সরকার নেই। কাজ করতে সুবিধা। এই সুবিধাকে কাজে লাগান। কিন্তু অনেকে দেখছি বদলির জন্য অস্থির করে ফেলেন।’
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি বেশ ভালো করেছে। আমরা তাদের স্বাধীনতা পদক দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। আমি চাই বরিশালেও কৃষিতে ভালো করুক। বরিশালকে পুরোনো শস্যভান্ডারের খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনারা সে লক্ষ্যে কাজ করুন।’
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জুবাইর হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার মো. রাইহান কাওছারসহ কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।