‘সবাই বিজয় পতাকা নিয়ে ঘরে ফিরলেও আমার বুকের মানিক ফিরেছে লাশ হয়ে’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত সামিদ হোসেনের কবরের পাশে বাবা-মা ও ভাই। আজ সোমবার সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের তেঘুরী গ্রামেছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সামিদ হোসেন (১৯)। ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকার উত্তরায় সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে প্রাণ হারান এই শিক্ষার্থী। নতুন সরকারের কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাইছেন সামিদের বাবা-মা।

মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের তেঘুরী গ্রামের ফরহাদ হোসেনের বড় ছেলে সামিদ হোসেন (১৯)। তিনি কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড রিকন্ডিশনিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

স্বজনেরা বলেন, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উত্তর আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল। সামিদ হোসেন ও তাঁর বাবা ফরহাদ হোসেন সকাল থেকেই ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সামিদ। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত বা আইনি কোনো পদক্ষেপ ছাড়াই পরের দিন ৬ আগস্ট মুক্তাগাছার উপজেলার মানকোন তেঘুরীতে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে সামিদকে দাফন করা হয়।

আজ সোমবার তেঘুরী গ্রামে সামিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারানোর শোকে এখনো কাঁদছেন বাবা-মা। ছেলের কথা মনে হলেই ছুটে যান কবরের কাছে।

সামিদের বাবা ফরহাদ হোসেন গাজীপুরের চেরাগ আলীতে একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে চেরাগ আলীতে বসবাস করি। ছেলের কলেজ বন্ধ থাকায় আমার কাছে চলে আসে কিশোরগঞ্জ থেকে। ৫ আগস্ট ছেলে যায় তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে, আর আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যাই। কিন্তু বিকেলে খবর পাই ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাঁর মাথার বাঁ পাশে গুলি লেগে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ছেলের মৃত্যু হয়। ছেলের লাশ আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

৫ আগস্ট বাসা থেকে বের হওয়ার পর সামিদ শেষবার দুপুরে কল করেছিলেন জানিয়ে তাঁর মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘ফোন করেই বলতে শুরু করে, “হ্যালো, মা বলেছিলাম না আজ সরকারের পতন হবে। কিছুক্ষণ পরেই সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, শুনতেছি হাসিনা নাকি দেশ ছেড়ে পলাইছে।”’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিল্পী আক্তার। তিনি আরও বলেন, ‘সবাই বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঘরে ফিরলেও আমার বুকের মানিক ফিরেছে লাশ হয়ে।’

নিহতের ছোট ভাই সাকিম হোসেন বলেন, ‘ভাইয়া সব সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্যের কথা বলতেন। বলতেন, ছাত্র আন্দোলনের কখনো বৃথা যায়নি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’