খেলার মাঠ, কবরস্থান না হওয়ার আক্ষেপ

গত নির্বাচনে খেলার মাঠ আর কবরস্থান করে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এরপর কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

টঙ্গীর বিসিক পাগাড় এলাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড। গতকাল সোমবার দুপুরে ওয়ার্ডের ফকির মার্কেট এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় ওয়ার্ডের মূল সমস্যা কী বা কোন কোন নাগরিক সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। একজন বললেন, ওয়ার্ডের মূল সমস্যা নিজস্ব কবরস্থান ও খেলার মাঠের অভাব। খেলার মাঠ না থাকায় শিশুরা দিন দিন মাদকাসক্তি ও প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর কবরস্থানের অভাবে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে ছুটতে হয় অন্যের দুয়ারে।

নগরের ঝিনু মার্কেট, পাগাড় মধ্যপাড়া, ফকির মার্কেট, সোসাইটির মাঠ, টিয়ালি মার্কেট, খ্রিষ্টানপাড়া ও টেকপাড়া নিয়ে গঠিত ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড। জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩০ হাজার ৮৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৭ হাজার ২৬৭ এবং পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৬০৩ জন। ভোটকেন্দ্র ১৩টি এবং ভোটকক্ষ ৯১টি। ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর আসাদুর রহমান (কিরণ)। তিনি বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

এত দিনেও ওয়ার্ডের কোথাও একটি খেলার মাঠ হয়নি। ফলে ছেলেমেয়েরা সারা দিন ঘরবন্দী হয়ে থাকে। দিন দিন টিভি–মোবাইলের প্রতি আসক্তি বাড়ছে।
ইসমাইল মোল্লাহ, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার

ওয়ার্ডটিতে কলকারখানার পাশাপাশি প্রচুর ভাসমান শ্রমিকের বসবাস। কিন্তু সিটি করপোরেশন গঠনের ১০ বছর পার হয়ে গেলেও এখানে মেলেনি সব নাগরিক সুবিধা। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রবসহ আছে নানা সমস্যা। তবে বাসিন্দারা বলছেন, তাঁদের মূল সমস্যা খেলার মাঠ ও কবরস্থানের অভাব।

তৃতীয় মেয়াদে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। প্রতিটি ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে নির্বাচনী ঢামাডোল। এর মধ্যে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে একাধিক ব্যক্তির নাম। এর মধ্যে রয়েছেন আসাদুর রহমানের ভাতিজা খালেদুর রহমান, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ইসমাইল শেখ, আজমেরী খান, মাহমুবুল আলম। কাউন্সিলর আসাদুর রহমান এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের অনেকেই নিজেদের প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। কেউ কেউ বাসাবাড়ির দেয়ালে সাঁটিয়েছেন পোস্টার। এর বাইরে চায়ের দোকান, কোনো আড্ডা বা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। মুঠোফোনে কল বা খুদে বার্তার মাধ্যমেও কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। পাশাপাশি এলাকার লোকজনের কথাবার্তায়ও বইছে নির্বাচনের হাওয়া। ভোটারদের দাবি, প্রতিবার নির্বাচনের কিছুদিন আগে প্রার্থীরা মাঠে সরব হন। বিভিন্নভাবে তাঁদের নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু বছরের অন্য সময়গুলোতে তাদের কোনো খোঁজ থাকে না।

ওয়ার্ডের একটি রাস্তার মোড়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ইসমাইল মোল্লাহর সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এত দিনেও ওয়ার্ডের কোথাও একটি খেলার মাঠ হয়নি। ফলে ছেলেমেয়েরা সারা দিন ঘরবন্দী হয়ে থাকে। দিন দিন টিভি–মোবাইলের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। গত নির্বাচনে (২০১৩) আমরা প্রার্থীদের কাছে বারবার এসব জিনিস আবদার করেছিলাম। নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিতে অনুরোধ করেছিলাম। বিশেষ করে একটি খেলার মাঠ করতে সবাই মিলে ধরেছিলাম। প্রার্থীরাও আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেসবের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।’

ওয়ার্ডের ফকির মার্কেট এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে একটি সরকারি হাইস্কুল বা কলেজ নাই। এখানকার অনেক ভোটার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। অতিরিক্ত খরচের কারণে সন্তানদের ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারে না। আমরা গত নির্বাচনে সব প্রার্থীদের কাছে একটি হাইস্কুল ও কলেজ দাবি করেছিলাম, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা কম খরচে পড়তে পারে। কিন্তু নির্বাচন শেষে এসব আর কেউ মনে রাখেনি। ফলে স্কুলও হয়নি।’

তবে ওয়ার্ডটির রাস্তাঘাট বেশ ভালো। বেশির ভাগ রাস্তাই পাকা বা আরসিসি ঢালাই দেওয়া। ফলে বাসিন্দরা চেলাফেরাও তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনো নাজুক। ভারী বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। তখন পানির কারণে চলাফেরা কষ্ট হয়ে পড়ে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের বিষয়ে ইতিমধ্যে জমি নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই স্কুলের কাজ শুরু হবে। আর খেলার মাঠ, কবরস্থান নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবই হবে।