ছাত্র-জনতার ওপর গুলির মামলায় কুমিল্লায় আওয়ামী লীগপন্থী চার আইনজীবী কারাগারে

কুমিল্লার আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীকে। সোমবার বিকেলে তোলা ছবি
প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলায় কুমিল্লার ২৪ জন আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন করলে চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

এর মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। বাকিদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে দায়ের করা মামলায় কুমিল্লার আওয়ামী লীগপন্থী ২৬ আইনজীবীকে আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার পর আইনজীবীরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২৬ আইনজীবীর মধ্যে ২৪ জন আজ সোমবার কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে ২০ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করলেও চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কুমিল্লার আদালতে অনুপস্থিত থাকা দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (জেলা পিপি) কাইমুল হক (রিংকু)। তিনি বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁদের জামিন চাইলেও রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। তবে আদালত শুনানিতে দুই পক্ষের কথা শুনে এই আদেশ দিয়েছেন। ওই চারজনকে আদালত পুলিশের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারাগারে পাঠানো চার আইনজীবী হলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (লিটন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞা, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে জিয়াউল হাসান ও মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ আগস্ট কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার অভিযোগে ১২ ফেব্রুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনসহ ২৬১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হওয়া মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদেরও আসামি করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক মামলাটি করেন।

আদালতে হাজির হওয়া ২৪ আইনজীবীর পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি ওই মামলা হওয়ার পর আইনজীবীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে ১৪ এপ্রিল ২৬ আইনজীবী কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদনটি শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন আজ সোমবার।

১২ ফেব্রুয়ারি হওয়া ওই মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক এমপি বাহারসহ কয়েকজনের হুকুমে আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট নগরের পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। তাঁরা ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণসহ এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে মামলার সাক্ষীরাসহ ২৫ থেকে ৩০ জন বুক, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে অনেকের হাড় ভাঙাসহ জখম করেন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার চিৎকারে এলাকাবাসীসহ কয়েকজন সাক্ষী ঘটনাস্থলে এলে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে চাইলে আসামিরা বাধা দেন।

শুরু থেকেই মামলাটিতে আইনজীবীদের আসামি করার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি দাবি করেন, একই ঘটনায় এর আগেও অন্তত চারটি মামলা হয়েছে। এই মামলা সম্পূর্ণ হয়রানিমূলকভাবে করা হয়েছে। তাঁরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।