‘আমার স্বামীকে ওরা বাঁচতে দিল না, আমি এই হত্যার বিচার চাই’

শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়ার ছেলে তানভীর আহমেদ আহাজারি করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

‘আমার স্বামী রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ ও মানুষের উপকার করতেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করে মানুষের আরও বেশি সেবা করবেন। কিন্তু ওরা আমার স্বামীকে বাঁচতে দিল না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নূরে আলমের পরিকল্পনায় আর বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ও তার সহযোগীরা আমার স্বামীকে নির্মমভাবে মেরে ফেলল। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’

প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস গোলাম জাকারিয়া বাদলের স্ত্রী পপি বেগম এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামীর বাড়িতে বসে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলেন তিনি।

বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়া সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। তাঁকে হত্যার অভিযোগে এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে সদর থানার পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ‍দুজনকে আটক করেছে।

গোলাম জাকারিয়ার স্ত্রী পপি বেগম আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীর বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন তাঁর স্বামী। এ জন্য নূরে আলম বিভিন্ন সময় তাঁর স্বামীকে হুমকি দিতেন। এমনকি কয়েক মাস আগে তাঁর স্বামীর ওষুধের দোকান ভাঙচুরও করেন। বিভিন্ন মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নূরে আলম সিদ্দিকী সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বর্তমানে শেরপুর জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান কারাগারে গিয়ে নূরে আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর নূরে আলমের নির্দেশে লুৎফর রহমান ও তাঁর ১৫-১৬ জন সহযোগী তাঁর (পপি বেগম) স্বামী জাকারিয়া বাদলকে কুপিয়ে হত্যা করেন। নূরে আলমের নির্দেশে তাঁর (জাকারিয়া) ওপর হামলা করার কথা মৃত্যুর আগে জাকারিয়া স্বজনদের কাছে বলে গেছেন।

তবে নূরে আলম সিদ্দিকী কারাগারে আটক থাকায় ও লুৎফর রহমান পলাতক থাকায় বিএনপি নেতা পপি বেগমের স্বামী গোলাম জাকারিয়াকে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে গোলাম জাকারিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জাকারিয়া হত্যাকাণ্ডে তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসী মধ্যে শোকে মুহ্যমান। বাড়ির আঙিনায় অনেক প্রতিবেশী ও স্বজন ভিড় করে আছেন। জাকারিয়া বাদলের স্ত্রী পপি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বড় ছেলে তানভীর আহমেদ কাঁদছেন। আর ছোট ছেলে গোলাম তাহসিনুর তাবিব অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে।

শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়ার বড় ছেলে তানভীর আহমেদ মা পপি বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় জাকারিয়ার স্ত্রীর বড় ভাই সাদিকুল ইসলাম শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতির নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবদুল করিম বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বৃহস্পতিবার দুপর ১২টায় সদর উপজলার ভীমগঞ্জ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল কলেজ মাঠে বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। পরে জাকারিয়ার লাশ রঘুনাথপুর রাহমানিয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়ার ওপর হামলা ও তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বুধবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘শেরপুরে হামলায় বিএনপি নেতার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ’ ও ‘শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।