সিরাজগঞ্জে টাকা ছিনতাইয়ের জন্য মুদিদোকানিকে গলা কেটে হত্যা: পুলিশ
টাকা ছিনতাই করার জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মুদিদোকানি রইস উদ্দিনকে (৫৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ওই মুদিদোকানিকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং নিহত ব্যক্তির দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, খুন হওয়া রইস উদ্দিন শাহজাদপুর উপজেলার কংলাকান্দা এলাকার অমর আলীর ছেলে। রইস উদ্দিনকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুজন হলেন একই উপজেলার নলুয়া গ্রামের আজিজ মণ্ডলের ছেলে মামুন সেখ (২৮) এবং জুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের রানু সেখের ছেলে জয়নাল সেখ (৫০)।
মুদিদোকানি রইস উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে পুলিশের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শাহজাদপুর পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নলুয়া বটতলা এলাকার রইস উদ্দিনের একটি মুদিদোকান আছে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু প্রায় ৯ বছর আগে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে তালাক দিয়ে চলে যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। নিজ বাড়িতে তিনি নিজেই রান্না করে খেতেন। মাঝেমধ্যে দোকানের পাশেই একটি ঘরে রাতে থাকতেন।
পুলিশের ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর সকাল ছয়টায় দোকানে আসেন। কিন্তু রাতে আর দোকান থেকে বাড়িতে ফেরেননি। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পেয়ে স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে দুলাল হোসেন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজের ১৫ দিন পর স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে নলুয়া বটতলার একটি ডোবা থেকে তাঁর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন রইস উদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। গতকাল বুধবার বিকেলে নলুয়া বটতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রইস হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রইস উদ্দিনের দোকানের পাশের ঘরের শৌচাগার থেকে তাঁর দুটি মুঠোফোন এবং ওই দোকানের পাশের ডোবা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আরও জানায়, মামুন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও জয়নাল ভবঘুরে। তাঁরা রইস উদ্দিনের পূর্বপরিচিত। তাঁরা মাঝেমধ্যে রইস উদ্দিনের দোকানে বসে আড্ডা দিতেন। একপর্যায়ে মামুন ও জয়নাল ব্যবসায়ী রইসের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন শাহজাদপুর বাজার থেকে একটি ছুরি কিনে আনে। এরপর ৩ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে তাঁরা রইসকে অনুসরণ করতে শুরু করেন। রাত ১০টার পর রইস উদ্দিন দোকানের পাশে সেই ঘরে রাতে ঘুমাতে যান।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আরও জানান, ৩ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে মামুন ও জয়নাল ব্যবসায়ী রইস উদ্দিনের দোকানের পাশের ঘরে গিয়ে তাঁকে ডাকাডাকি করেন। রইস বাইরে বের হলে জয়নাল তাঁকে চেপে ধরেন। এই সময় রইস মাটিতে পড়ে যান। এরপর মামুন ব্যবসায়ী রইস উদ্দিনকে গলা কেটে করে হত্যা করেন। পরে জয়নাল ও মামুন ঘরের ঢুকে রইসের বিছানার তোশকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ সময় রইসের দুটি মুঠোফোন ওই বাড়ির শৌচাগারে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি রইসের বাড়ির পাশে ডোবায় ফেলে দেন তাঁরা। শেষে মামুন রইসের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে জয়নালের সহায়তায় স্থানীয় শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেন
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জয়নাল সেখ ও মামুন সেখকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।