উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে র্যাবের অভিযান, আরসার ‘গান কমান্ডার’ গ্রেপ্তার
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১০) বিশেষ অভিযান চালিয়ে র্যাব মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ‘গান কমান্ডার’কে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর নাম মো. জাকারিয়া (৩২)। এ সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহৃত একটি জি-৩ রাইফেল ও পাঁচটি গুলি উদ্ধার করা হয়। র্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার জাকারিয়া আরসার ‘গান কমান্ডার’ ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আশ্রয়শিবিরের এফ-১৭ ব্লকে এ অভিযান চালানো হয়।
ভারী অস্ত্র, গুলিসহ আরসার ‘গান কমান্ডার’কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজ শুক্রবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাত হোসেন। গ্রেপ্তার আরসার গান কমান্ডার জাকারিয়া বালুখালী আশ্রয়শিবিরের এফ-১৭ ব্লকের রোহিঙ্গা আলী জোহারের ছেলে।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাত হোসেন বলেন, বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১০) নাশকতার উদ্দেশ্যে আরসা সন্ত্রাসীরা পাশের দেশ (মিয়ানমার) থেকে ভারী অস্ত্র নিয়ে আসেন। সেনা ও র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে র্যাবের একটি বিশেষ দল সেখানে হানা দেয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় মো. জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জাকারিয়ার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পালংখালী এলাকা থেকে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহৃত একটি ভারী অস্ত্র জি-৩ রাইফেল ও পাঁচটি গুলি উদ্ধার করা হয়। জাকারিয়ার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে উখিয়ার থাইংখালীর তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৯) আরসার সঙ্গে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় খুন হয়েছেন আরসার আরেক ‘গান কমান্ডার’ আবদুল মোনাফ (২৭)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের এ-৪ ব্লকের রোহিঙ্গা আজিম উল্লাহর ছেলে। নিহত মোনাফের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা ও একটি অস্ত্রসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে জাকারিয়া উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে বসবাস শুরু করেন। এরপর তিনি আরসার নেট দল অর্থাৎ সংবাদদাতা এবং পরবর্তী সময় গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে জাকারিয়াকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০–এর ব্লক-এফ/১৭–এর ‘ব্লক কমান্ডার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময় জাকারিয়ার নেতৃত্বে আশ্রয়শিবিরে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরবর্তীকালে তাঁকে গান কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির সঙ্গে জাকারিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জাকারিয়া স্বীকার করেন, আরসার কিলিং মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন। সেখান থেকে তাঁরা সংগ্রহ করে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ঘাটির বিলে লুকিয়ে রাখেন। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের পর জাকারিয়ার স্বীকারোক্তি মতে পালংখালীর সেই ঘাটির বিল থেকে জি-৩ রাইফেল ও পাঁচটি গুলি উদ্ধার করা হয়।
আরসার সন্ত্রাসী জাকারিয়াকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলা করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, আশ্রয়শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের অভিযান অব্যাহত। ইতিমধ্যে আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস, গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা, কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন, আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজসহ ১১৭ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৫৩ দশমিক ৭১ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫টি গ্রেনেড, ১০টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৪টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৬টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭৮টি গুলি ও কার্তুজ, ৪টি আইডি, ৪৮টি ককটেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।