অবশেষে যশোর চেম্বারের নেতৃত্ব বদল: কী মধু আছে এই সংগঠনে, প্রশ্ন ব্যবসায়ীর

যশোর ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল শনিবার রাতে নবনির্বাচিত পর্ষদ সদস্যদের পরিচিতি ও কার্যভার হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

এক যুগ পর ‘যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’–এর নেতৃত্ব এসেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে যশোর ক্লাব মিলনায়তনে নবনির্বাচিত পর্ষদ সদস্যদের পরিচিতি ও কার্যভার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে সংগঠনের দায়িত্বভার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘যশোর সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী শহর। কিন্তু এত দিন চেম্বার কার্যকর থাকায় বিনিয়োগকারীরা এই শহরে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হননি। এখন চেম্বারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়া হবে।’

নওয়াপাড়া নৌবন্দরে সার ব্যবসায়ী মো. শাহজালাল বলেন, ‘ভৈরব নদ খনন করার ফলে এখন খুলনা থেকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের কার্গো নওয়াপাড়া নৌবন্দরে আসে। এই খনন অব্যাহত রাখতে হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা ভয়াবহ। মহাসড়কটি ছয়লেনে উন্নীতকরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়ে আছে। ছয়লেনের কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয়, সেটি চেম্বারের মাধ্যমে তরান্বিত করতে হবে। কারণ, নওয়াপাড়ার সার এই সড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়।’

নবনির্বাচিত কমিটির উদ্দেশে ব্যবসায়ী চিন্ময় সাহা বলেন, ‘এক যুগ পরে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ব্যবসায়ীদের হাতে এল। কি মধু আছে এই সংগঠনে? যখন যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন তাঁরা আর নির্বাচন দেননি। বর্তমান কমিটি যেন দুই বছর পর একটি কার্যকরী নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। সামনে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন। সেখানে যেন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলেন—এমন প্রতিনিধি পাঠানো হয়। রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যে থাকা ব্যক্তিদের না পাঠানো হয়।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সংগঠনের প্রশাসক এস এম শাহীন। প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম ও বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, চেম্বারের নবনির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রসূল প্রমুখ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মর্জিনা আক্তার।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ১৯ সদস্যর কমিটির পদ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

গতকাল যশোর চেম্বারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ২৬ অক্টোবর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এদিন অন্য কোনো প্যানেল মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্ব প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়।

২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বারের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসনের একজন প্রশাসক।

চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গেছে, গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব ও আদালতে মামলা থাকার কারণে গত এক যুগ ধরে যশোর চেম্বারের নির্বাচন হয়নি। ১০ বছর ধরে প্রশাসক নিয়োগ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হয়।

২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বারের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়ী হয়। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসনের একজন প্রশাসক।