আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে প্রথম ট্রেনটি চালিয়ে যা বললেন সাজু
লোকোমোটিভ মাস্টার সাজু কুমার দাস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেলের বিভিন্ন নতুন পথে একাধিকবার ট্রেন চালিয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হলো নতুন এক অধ্যায়। এবার আন্তদেশীয় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে প্রথমবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়েছেন তিনি। এতেই খুশির জোয়ারে ভাসছেন সাজু কুমার।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনটি মালবাহী ওয়াগন, একটি গার্ডব্রেকসহ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন থেকে শিবনগর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চলাচল করে। নতুন এই রেলপথের এটি ছিল প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল। ট্রেনে চালনায় লোকোমোটিভ মাস্টার সাজু কুমারের সঙ্গে ছিলেন সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার মো. বেলায়েত হোসেন।
সাজু কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন থেকে যখন আখাউড়ার দিকে যাই কিংবা আখাউড়া থেকে গঙ্গাসাগর অতিক্রম করি, তখন এই রেলপথের (আখাউড়া-আগরতলা) কর্মকাণ্ড চোখে পড়ত। কিন্তু আমি যে পথ দিয়ে ট্রেন নিয়ে যাব, এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। এটা আমার স্বপ্নের চাইতেও বেশি কিছু হয়ে গেছে। এই অনুভূতি ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উদ্বোধনী ডেমু ট্রেন এবং সম্প্রতি লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজ লাইনের উদ্বোধনী ট্রেনের চালক ছিলেন সাজু কুমার। তিনি বলেন, গত ৩১ আগস্ট তিনি রেলওয়ে থেকে আখাউড়া-আগরতলা পথের প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর নির্দেশ পান। যখন আদেশটি হাতে পান, তখন আবেগাপ্লুত হয়েছেন। কারণ, অনেক লোকোমাস্টারের মধ্যে তাঁকে এই কাজের জন্য বাছাই করা হয়েছে।
পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর পর সাজু কুমার বলেন, গঙ্গাসাগর থেকে শিবনগর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক এই ট্রেন ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়েছেন তিনি। আর ফেরার পথে ১৬ কিলোমিটার গতিতে গঙ্গাসাগর স্টেশনে পৌঁছেছেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রেনে করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যেতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া লাগে। এতে সময় লাগে প্রায় ৩১ ঘণ্টা থেকে ৩৬ ঘণ্টা। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প চালু হলে আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতায় যাতায়াতে দূরত্ব ৫৫০ কিলোমিটার। তখন প্রায় ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।
ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এই রেলপথ নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ও আগরতলা অংশে ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একটি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।