ভোটের মাঠে সরব ৪ প্রার্থী

প্রতীক বরাদ্দের পরই সরগরম হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনী মাঠ। দিন-রাত এক করে যেমন প্রচার প্রচারণা চলছে, তেমনি চলছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে কথার লড়াই। প্রতিটি এলাকা ছেয়ে গেছে ব্যানার-পোস্টারে। এই আসনে মোট আটজন প্রার্থী হলেও মাঠে সরব চারজন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। টানা চতুর্থবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাঁর বিপরীতে সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারসহ আরও আটজন।

তাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূঁইয়া (কেটলি), গোলাম দস্তগীরের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোর্তুজা (ঈগল), গোলাম দস্তগীরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান (আলমারি) ও জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (ট্রাক) প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এ কে এম শহিদুল ইসলাম (মোমবাতি) ও জাকের পার্টির মো. জোবায়ের আলম (গোলাপ ফুল) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

গতকাল বুধবার রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কাগজে-কলমে ৯ জন প্রার্থী হলেও এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে চারজনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা দেখা গেছে। গোলাম মোর্তুজা ও হাবিবুর রহমান প্রার্থী হলেও তাঁরা গোলাম দস্তগীরের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। রূপগঞ্জের ভোটাররা বলছেন, আসনটিতে গোলাম দস্তগীর, শাহজাহান ও তৈমুর আলমের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম।

সরেজমিনে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চার প্রার্থীর অনেক পোস্টার-ফেস্টুন চোখে পড়েছে। তাঁদের মধ্যে গোলাম দস্তগীরের পোস্টার ও ফেস্টুন বেশি। রূপসী বকুল চত্বর এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কথা হয় কারখানার শ্রমিক মাহবুবুল আলম, ট্রাকচালক মূইজ উদ্দিন ও দোকানি আলফাজ মিয়ার সঙ্গে। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানালেন, তাঁরা তিনজনই রূপগঞ্জের ভোটার। ভোটের মাঠে কী হচ্ছে, সে বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ থাকলেও ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না, তা এখনই ঠিক করেননি।

মাহবুবুল আলম জানান, গেল দুটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়েও তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছে। এবার বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভাবতেন। গত দুবারের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে মাহবুবুল এবার আর ভোট দিতে যাবেন না। আর মূইজ উদ্দিন ও আলফাজ মিয়ার অপেক্ষা নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের জন্য। ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে তাঁরা কেন্দ্রে যেতেও পারেন।

বিকেলে মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় গোলাম দস্তগীরের সমর্থকদের একটি মিছিল দেখা যায়। মিছিলকারীরা জানালেন, গোলাম দস্তগীরের ছেলে গোলাম মোর্তুজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বাবার পক্ষে ভোট চেয়ে উঠান বৈঠক করবেন। সেখানেই যাচ্ছেন তাঁরা।

বাজারেই কথা হলো বিভিন্ন পেশার অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে। সবজি বিক্রেতা আবু ইউসুফ তাঁদের একজন। এই ভোটার মনে করেন ভোটে গোলাম দস্তগীর এবং দলীয় স্বতন্ত্র শাহজাহান ভূঁইয়ার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আরেক প্রার্থী তৈমুর আলম নারায়ণগঞ্জ শহরের বড় নেতা হলেও রূপগঞ্জে তাঁর কর্মী-সমর্থক নেই। আর বিএনপি থেকে বের হওয়ার পর সাধারণ মানুষের কাছেও তৈমুরের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। এই তিনের বাইরে জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম ভোটের মাঠে আলোচনায় আছেন।

রূপগঞ্জের ভোটাররা বলছেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটের শঙ্কা ছিল তাঁদের। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে একাধিক প্রার্থীর সরব উপস্থিতি, প্রার্থীদের মধ্যে কথার লড়াই এবং জোর প্রচারণার ফলে রূপগঞ্জে নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রচারণা শেষে কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে যাওয়াটাই হবে প্রার্থীদের জন্য বড় পরীক্ষা।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জের মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন ভোটার আছেন। সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার ১২৮টি কেন্দ্রের ৮১৭টি কক্ষে এবারের ভোট গ্রহণ হবে। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ এবং ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাঁরা কাজ করছেন।