ফরিদপুরের চরভদ্রাসন
১১ মাস বন্ধ সড়কের কাজ
ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ১১ মাস ধরে প্রায় এক কিলোমিটার একটি সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। ইটের খোয়া ফেলে রাখায় এবড়োখেবড়ো সড়ক দিয়ে চার গ্রামের লোক ঠিকমতো চলাচল করতে পারেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে খোয়া উঠে সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার সুপারিশ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কজুড়ে এলোমেলো করে ফেলে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে। খুব কম রিকশা-ভ্যান চলে। স্থানীয় লোকজন বলেন, সড়কের জন্য চরম ভোগান্তিতে রয়েছে ফাজেল খার ডাঙ্গী, এমপি ডাঙ্গী, বালিয়া ডাঙ্গী (মুসলিম) ও মোল্লার ডাঙ্গীর চার গ্রামের ৭০ হাজার মানুষ।
ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা হারুন খান বলেন, সড়কটিতে আগে ইট বিছানো ছিল। সবাই সহজে চলাচল করতে পারত। তাঁরা ভেবেছিলেন সড়ক পাকা হবে। চলাচলে আরও সুবিধা হবে। কিন্তু সে আশা গুড়ে বালি। রাস্তাটির এমন হাল করে রাখা হয়েছে যে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিলেও রিকশা-ভ্যান এ এলাকায় আসতে চায় না।
ভেবেছিলেন সড়ক পাকা হবে। চলাচলে আরও সুবিধা হবে। কিন্তু রাস্তাটির এমন হাল করে রাখা হয়েছে যে ভোগান্তির শেষ নেই।
ফাজেল খাঁর ডাঙ্গী গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতে আগুন লাবে। তবে রাস্তাটি খারাপ থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে অনেক সময় লাগে। আগুনে তিনি সর্বস্ব হারিয়েছেন।
সড়কটি চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল মোল্লা বলেন, এ সড়ক দিয়ে এলাকার চারটি গ্রামের লোক যাতায়াত করেন। সড়কে নামলেই প্রত্যেককে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। তিনি এ জনদুর্ভোগ দূর করতে অতি দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করার দাবি জানান।
উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায় ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ গ্রামীণ সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের(ভিআরআরপি) আওতায় চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের মোস্তফার বাড়ি থেকে এমপি ডাঙ্গী ভায়া বালিয়া ডাঙ্গী সংযোগ সড়কের ৯৭৬ মিটার পাকা করার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স সাদমান অ্যান্ড ব্রাদার্স। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭২ লাখ ২৭ হাজার টাকা। কাজ শেষ করার তারিখ ছিল ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তিন মাসে ওই সড়কে ইট বিছানোর কাজ করে। এরপর ১৩ জুন ঠিকাদার ৫২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেন। আংশিক ওই বিল তোলার পর গত বছর জুন থেকেই কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাদমান অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. সাদমানকে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই দফা ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।
উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, কাজ বন্ধ করে রাখার দুই মাস পর গত ১৭ আগস্ট তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেয়। গত অক্টোবরে নতুন উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন মো. জালাল উদ্দীন খান।
জালাল উদ্দীন বলেন, তিনি মৌখিকভাবে ঠিকাদারকে কয়েক দফা কাজ শেষ করার জন্য বলেছেন। তারপরও কাজ শুরু না করায় ২০ নভেম্বর জালাল উদ্দীন কাজটির চুক্তি বাতিলসহ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ফরিদপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চিঠি দেন। চিঠি দেওয়ার ছয় মাস পরও কোনো নির্দেশনা পাননি।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামান খান বলেন, যে প্রকল্পের আওতায় ওই সড়কের কাজ হচ্ছে তা আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের সুযোগ নেই। তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঠিকাদার দ্রুত কাজটি শেষ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।