গরুকে পানি দিতে ঘুম থেকে ডেকে তোলায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
রংপুরের বদরগঞ্জে সাত মাস আগে মারা যাওয়া দুই সন্তানের জননী নিলুফা ইয়াছমিন (৩২) আত্মহত্যা করেননি। ঘুম থেকে ডেকে তুলে গরুকে পানি খাওয়াতে বলায় নিলুফার স্বামী সহিদার রহমান (৩৭) তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিলুফাকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর গতকাল শনিবার নিহত নিলুফা ইয়াছমিনের বাবা আবদুল মমিন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ স্বামী সহিদার রহমানকে গ্রেপ্তার করার পর রংপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠালে তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আজ রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নিলুফার স্বামী সহিদার রহমান (৩৭) স্থানীয় একটি বাজার রাতে পাহারা দেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাজারে পাহারা দেওয়ার পর তিনি ভোরে বাড়িতে এসে ঘুমান। দুপুরের দিকে তাঁর স্ত্রী নিলুফা তাঁকে (সহিদার) ঘুম থেকে ডেকে তুলে গরুকে পানি খাওয়াতে বলেন। এতে সহিদার ক্ষিপ্ত হয়ে নিলুফার গলা চেপে ধরেন। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে গেলে নিলুফাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে রেখে বাইরে চলে যান। এর আধা ঘণ্টা পর সহিদার আবার ঘরে ঢুকে বাড়ির অন্য লোকদের সহায়তায় নিলুফার গলায় রশি লাগিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার প্রচারণা চালান। এরপর মৃত নিলুফার লাশ চিকিৎসার নামে বিকেলে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে বদরগঞ্জ থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়। গত ১ জানুয়ারি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ নিলুফার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলে পরে দাফন করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মতামত দেন, নিলুফাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন বদরগঞ্জ থানা-পুলিশ হাতে পাওয়ার পর গতকাল নিহত নিলুফার বাবা আবদুল মমিন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় নিলুফার স্বামী সহিদার রহমান, শ্বশুর আবদুল হাইসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোয়ার হোসেন গতকাল সহিদারকে গ্রেপ্তার করে সন্ধ্যায় আদালতে পাঠান।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, চাঞ্চল্যকর না হলেও ঘটনাটি সচেতনতার বার্তা দেয়। সমাজে বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার খবর পুলিশের কাছে আসে। সন্দেহ হলে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়। তখন বিভিন্ন লোকজন দিয়ে তদবির করে পুলিশের কাছ থেকে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ আইন অনুযায়ী লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় বলেই আজ এমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্ঘাটিত হলো। এটি বিচারের আওতায় এল। কাজেই এমন ঘটনা ঘটলে সবার উচিত পুলিশকে সহায়তা করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) তরিকুল ইসলাম।