প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপপরিচালক মো. আবু জাফর গ্রামে বড় করে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। সে জন্য ৪-৫ বছর আগে ৬০ শতাংশ জমি কিনে নির্মাণকাজও শুরু করেছিলেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন আবু জাফরের নিজ এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাইনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে পিএসসির দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত রবি ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ১৭ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর।
গলাচিপার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু জাফর এলাকায় খুব কম যেতেন। এ কারণে স্থানীয় অনেকেই তাঁকে চেনেন না। বিশেষ কাজে মাঝেমধ্যে বাড়িতে গেলেও উঠতেন শ্বশুরবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণকলস গ্রামে। কথাবার্তায় তাঁকে খুব ভালো মানুষ হিসেবেই জানতেন এলাকার পরিচিত ব্যক্তিরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই বিস্মিত হন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কলাগাছিয়া গ্রামে গিয়ে আবু জাফরের বাড়ির সন্ধান চাইলে অনেকেই তাঁকে চিনতে পারেননি। পরে ওই এলাকার ইউপি সদস্য মো. আয়ুব আলী ঠিকানা বলে পথ দেখিয়ে দেন। কলাগাছিয়া কুমারখালী বাজার এলাকায় আবু জাফরের বাড়িতে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া আছে। বাড়ির প্রবেশমুখে গেট ও ভেতরে একতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ছাদ ঢালাই পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবু জাফরের বাড়ি আর আমার বাড়ি কাছাকাছি। তাঁদের পুরোনো বাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পর চার-পাঁচ বছর আগে কলাগাছিয়া কুমারখালী বাজার এলাকায় ৬০ শতাংশ জমি কিনে নতুন বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন। বাড়ি নির্মাণে ধীরগতি হওয়ায় একদিন জানতে চাইলে আবু জাফর তাঁর বাড়িটি বড় করে নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।’ চেয়ারম্যান জানান, আবু জাফরের নিজ এলাকায় এর বাইরে তেমন সম্পদ নেই। যদি থাকে তা অন্যত্র থাকতে পারে।
আবু জাফর মাঝেমধ্যে বাড়িতে এলেও ওঠেন পাশের ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণকলস গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। তাঁর বাড়ি থেকে সেটির দূরত্ব সাত-আট কিলোমিটার। গতকাল কল্যাণকলস গ্রামের সিকদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবু জাফরের শ্বশুরের টিনের দোতলা ঘর। বাড়ির পেছনে টিনের বেড়া দেওয়া এবং সেখানেও টিনের একটি দ্বিতল ঘর আছে। আবু জাফরের গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় কয়েকজন ওই বাড়িতে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। পাশেই আছে ওই বাড়ির আমিন উদ্দিন জামে মসজিদ।
মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম জানান, বছর দুই আগে আবু জাফর তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। এখানে এলে মাদ্রাসায় সাহায্য–সহযোগিতা করতেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আবু জাফরের স্ত্রীর বড় ভাই আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আবু জাফর তেমন লোক নয়। সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। হয়তো তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে।’
আবু জাফরের ছোট ভাই মো. জালাল মিয়া কলাগাছিয়া গ্রামে ছোট একটি বাড়িতে থাকেন। তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। আবু জাফরের বিষয়ে কথা বলতে তাঁর জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
আবু জাফরের দূরসম্পর্কের চাচা মো. আউয়াল মিয়া (৭০) বলেন, তিনি আবু জাফরদের বাড়ি মিয়া বাড়ির মসজিদের সভাপতি। আবু জাফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাফর ছোট থেকে এলাকায় থাকেনি। ওর বোন ও ভগ্নিপতির কর্মস্থল খুলনায় লেখাপড়া ও বড় হয়েছে। গ্রামে না এলেও বাড়ির মসজিদের ১৮ জন এতিমের জন্য মাঝেমধ্যে টাকা পাঠিয়ে সহায়তা করত।’