খোকসায় গুলিবিদ্ধ গৃহবধূ ঢাকায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, ঘটনা নিয়ে রহস্য
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ঘটনাটি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পাঁচ দিন পর থানায় মামলা হলে পুলিশ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
গুলিবিদ্ধ গৃহবধূর নাম রহিমা খাতুন ওরফে সাগরিকা (২৩)। তিনি খোকসার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের উথলি গ্রামের হাবিব প্রামাণিকের স্ত্রী। এই দম্পতির হুমাইয়া (৫) ও নোমান (৩) নামের দুই সন্তান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে রাস্তার ওপর গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয় রহিমাকে। গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে গেছেন স্বামী হাবিব। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামীর পরিবারের লোকজন গোপনে গুলিবিদ্ধ গৃহবধূকে প্রথমে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সবশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
গতকাল সোমবার এ ঘটনায় খোকসা থানায় মামলা করেছেন আহত গৃহবধূর শ্বশুর আসলাম প্রামাণিক। মামলায় আসামি করা হয়েছে আনিস নামের এক যুবককে। ইতিমধ্যে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করা যায়নি।
প্রায় ১০ বছর আগে হাবিবের সঙ্গে রহিমার বিয়ে হয়। মা–বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় মৃত্যুর আগে শামসুদ্দিন তাঁর সিংহ ভাগ জমি বিক্রি করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা জামাতা হাবিবকে যৌতুক হিসেবে দেন। কিছুদিন পর শামসুদ্দিন মারা যান। এরপর জামাতা হাবিব বাকি জমি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য রহিমার ওপর চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছিল।
স্বজনদের অভিযোগ, গুলিবিদ্ধ গৃহবধূ রহিমা খাতুনের বাবার বাড়ি খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত শামসুদ্দিন। কয়েক বছর আগে মা মারা গেছেন। তিনি মা–বাবার একমাত্র সন্তান। প্রথম দফায় বাবার জমি বিক্রি করে স্বামী হাবিব সব টাকা নিয়ে নেন। এবার আরও প্রায় ২০ লাখ টাকার সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় রহিমাকে গুলি করা হয় বলে স্বজনেরা দাবি করছেন।
গুলিবিদ্ধ গৃহবধূর চাচি জেসমিন পারভিন বলেন, ‘তিন দিন আগে আমরা শুনতে পাই, মেয়েটা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারপর খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি, বারবার ফোন দিই, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। রোববার সকালে রহিমার “মৃত্যুর সংবাদ”ও আসে। এরপর মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, মেয়ে বেঁচে আছে। মেয়ের শাশুড়ির কাছে ফোন নম্বর নেওয়া চেষ্টা করি, কিন্তু নম্বর না দিয়ে টালবাহানা করেন তিনি। পরে নম্বর জোগাড় করে মেয়ের সঙ্গে কথা বলি।’ গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে জেসমিন আরও বলেন, ‘মেয়ে যেহেতু বেঁচে আছে, তাই তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। সে অস্ত্রধারীকে চিনেছে।’
জেসমিন পারভিন আরও জানান, প্রায় ১০ বছর আগে হাবিবের সঙ্গে রহিমার বিয়ে হয়। মা–বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় মৃত্যুর আগে শামসুদ্দিন তাঁর সিংহ ভাগ জমি বিক্রি করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা জামাতা হাবিবকে যৌতুক হিসেবে দেন। কিছুদিন পর শামসুদ্দিন মারা যান। এরপর জামাতা হাবিব বাকি জমি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য রহিমার ওপর চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছিল।
দুপুরে হাবিবের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিছানায় খেলছিল শিশু হুমাইয়া ও নোমান। তবে তাদের মা কোথায়, কেউ তা বলতে পারেননি।
গুলিবিদ্ধ গৃহবধূর চাচা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাবার বাড়ির সব সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য কয়েক বছর ধরে রহিমার ওপর হাবিব চাপ দিয়ে আসছিল। মেয়ে হয়তো রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর রাতের আঁধারে গুলি চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে মামলা হয়েছে, সেখানে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করা হয়েছে। রহিমা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দুই-তিন দিন ঘটনাটি গোপন করা হয়। তাঁদের খবর না দিয়ে চিকিৎসা করানোর মধ্যে দুরভিসন্ধি থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ জানান, গৃহবধূর পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। গুলিটি তাঁর বুকের বাঁ দিকে আটকে আছে। অস্ত্রোপচার করে গুলিটি অপসারণ করা যায়নি। ওই গৃহবধূ এখনো ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য স্বামী হাবিব হয়তো ব্যস্ত রয়েছেন।