কুমিল্লায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে কাজ শুরু হলেও অগ্রগতি নেই
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর পানির চাপে ভেঙে যাওয়া বাঁধটির মেরামতকাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রায় ২৫ দিন আগে মেরামতকাজ শুরু হলেও এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
বুড়বুড়িয়া এলাকায় অন্তত ১১০ মিটার বাঁধ ভাঙা থাকায় প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ আছে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া থেকে বুড়িচংয়ের কংশনগর পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কটি। সড়কটি দিয়ে কুমিল্লা শহর থেকে বুড়িচং সদর এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে সহজে চলাচল করা যেত। এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে স্থানীয়দের চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীরা। দ্রুত মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে সড়কটি সচল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত ২২ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধটি ভেঙে পড়েছিল। এতে তলিয়ে যায় পুরো বুড়িচংসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা। ওই সময় থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ আছে। আগে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করত। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মানুষকে বিকল্প পথে অনেক দূর ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান, কিং বাজেহুরার আবদুল গণিসহ স্থানীয় অন্তত পাঁচজন বাসিন্দা বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওই দিন থেকেই বাঁধটির মেরামতকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিন বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধীরগতিতেই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। হালচাষের ট্রাক্টরে ট্রলি লাগিয়ে গোমতী নদীর চর থেকে মাটি এনে ভেঙে যাওয়া বাঁধের পশ্চিম পাশে ফেলা হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চরের মধ্যে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এরপর এসব মাটি আনা হচ্ছে ট্রাক্টরে করে। ভেঙে যাওয়া বাঁধের পাশেই রয়েছে পুরোনো গোমতী নদীর একটি অংশ। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘মরা’ গোমতী নামে পরিচিত। সেখান থেকে ড্রেজিং করে আনা বালু ফেলা হচ্ছে মূল বাঁধের পাশের গর্তগুলোতে। কাজটি তদারক করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কৃষাণ দত্ত চৌধুরী ওরফে মুন্না।
সার্বিক বিষয়ে ঠিকাদার কৃষাণ দত্ত চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে সবকিছু প্রস্তুত করলেও আমরা মূলত কাজটি শুরু করেছি ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে। এর মধ্যে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাজ করতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কাজে ধীরগতির মূল কারণ হচ্ছে, আমাদের গোমতী নদীর চরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে মাটি আনতে হচ্ছে। মূল বাঁধটা মাটি দিয়েই নির্মাণ করতে হবে। চরে এখনো পানি ও কাদামাটি, যে কারণে ঠিকভাবে মাটি কাটা ও পারাপার করা যাচ্ছে না। আর মূল বাঁধের পাশে বিশাল আকৃতির কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে মরা গোমতী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আনা বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। সামনে বৃষ্টি না হলে আমরা কাজটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি। এখন ৮টি ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে। চরের পানি ও কাদা শুকিয়ে গেলে ডাম্প ট্রাকে করে এনে মাটি ফেলা হবে। তখন কাজ দ্রুত এগোবে।’ ডিসেম্বরে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল হোসেন ও মহিউদ্দিন বলেন, বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াবাসী। এখনো ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দেখলে আঁতকে ওঠেন স্থানীয়রা। তাই জোড়াতালি দিয়ে নয়; শক্ত ও মজবুতভাবে বাঁধটি মেরামত করা হোক, তাই চান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অন্তত পাঁচজন বলেন, বিগত সময়ে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অবাধে গোমতীর বালু লুট করেছেন। নদীর চরের কৃষিজমির মাটি কেটে চরকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। এসব কারণে এবার ভয়াল রূপ দেখিয়েছে গোমতী নদী।
গতকাল বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণের কাজ চলছে। ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। আমরা পরিকল্পনা করেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। তাই বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাঁধ মজবুত করেই নির্মাণ করা হচ্ছে।’