নওগাঁর মান্দা
তিন ফসলি জমিতে ভাটা নির্মাণের তোড়জোড়
ইটভাটাটি চালু হলে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি আশপাশের জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই একটি ইটভাটা নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এর চারপাশে ফসলি জমি রয়েছে। এ ছাড়া নিমার্ণাধীন ইটভাটা থেকে আধা কিলোমিটার দূরেই জনবসতি। ইটভাটাটি চালু হলে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি আশপাশের জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি উপজেলার তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তালপাতিলা শিবনগর এলাকার একটি মাঠে ‘এসইপি ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন ভাটাটির চিমনি নির্মাণের চলছে। নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটাটির মালিক আবদুল খালেক।
আশপাশের লোকজন বলেন, তালপাতিলা শিবনগর এলাকার ফসলি মাঠের প্রায় জমিই তিন ফসলি। এক মাস আগে শিবনগর এলাকায় ফসলি জমির মাঠে ইটভাটা নির্মাণের জন্য নির্মাণসামগ্রী ফেলা শুরু করেন উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক। ১৫ দিন আগে ইটভাটাটির চিমনি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি না পেলেও আবদুল খালেক ইটভাটা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৩ অনুযায়ী, ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আছে। এ ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা মানা হয়নি। কৃষিজমিতে ইটভাটা হলে চাষাবাদের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
তালপাতিলা গ্রামের কৃষক সলোমান হোসেন বলেন, ‘যে মাঠে ইটভাটাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সে মাঠের অধিকাংশ জমিই তিন ফসলি। ইটভাটাটি চালু হলে আশপাশের জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ ব্যাহত হবে। যেখানে ভাটা হচ্ছে সেখান থেকে কিছু দূরেই আমার চার বিঘা ফসলি জমি আছে। মাঝেমধ্যে টিভি-পত্রিকার খবরে দেখি, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে সে ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ইটভাটাটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে এই মাঠে যাঁদের জমি আছে, তাঁরা সবাই খুব চিন্তিত।’
উপজেলার চকউলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াকুব আলী মণ্ডল বলেন, একটি জমিতে চাইলেই যা খুশি তা-ই করা যায় না। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও তালপালিতা শিবনগর এলাকায় তিন ফসলি উর্বর জমিতে কীভাবে ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে? স্থানীয় কৃষকেরা সবাই এই ভাটা নিয়ে ক্ষিপ্ত। কিন্তু ভাটার মালিক প্রভাবশালী লোক হওয়ায় কেউই প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। তিন ফসলি জমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করতে দেওয়া উচিত নয়।
শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, এলাকাটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ইটভাটা নির্মাণ হলে পরিবেশদূষণের কারণে স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ইটভাটার কারণে আশপাশের ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। ইটভাটার এক থেকে দুই কিলোমিটার মধ্যে আম-কাঁঠাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলদ গাছের ফল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ইটভাটার কারণে এসব ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষিত। এসব ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ইটভাটা নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া।
এ বিষয়ে এসইপি ব্রিকস ইটভাটার মালিক আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটা চালু করা হবে।
অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিষয়টি জানেন না দাবি করে মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আনজুমান্দ বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।