নেত্রকোনার মদন
ভাতার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষকদের ডিপিএড প্রশিক্ষণের ভাতা উত্তোলন ফাইলের কাজ বন্ধ রাখার তথ্য পাওয়া গেছে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে ভাতা প্রদানের সময় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। চাহিদামতো ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষকদের ডিপিএড প্রশিক্ষণের ভাতা উত্তোলন ফাইলের কাজ বন্ধ রাখারও তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ডিপিএড প্রশিক্ষণে ছিলেন, তাঁদের প্রশিক্ষক উন্নীত ভাতা বকেয়া রয়েছে। প্রশিক্ষণের বকেয়া ভাতা উত্তোলনের জন্য মদন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ২৯ শিক্ষক আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন ডিপিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের ভাতা উত্তোলন করার আবেদন মঞ্জুর হয়। নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষক ডিপিএডের প্রশিক্ষণ ভাতা পাবেন স্কেল অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাতা উত্তোলনের ফাইলের কাজ করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও হিসাবরক্ষণ কার্যালয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বকেয়া ভাতার কাজ করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মদন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর জুবায়ের আহম্মেদের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের দাবি, জুবায়ের আহম্মেদ ২৬ শিক্ষকের কাছ থেকে ৭৮ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেছেন। এখন তিনি প্রশিক্ষণের মোট ভাতা থেকে একটি অংশ দাবি করছেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে অডিটর জুবায়ের আহম্মেদ বলেন, ‘বিল তৈরির জন্য টাকাপয়সা দিতে হয় না। আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে দায়ভার তাঁর। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে উপজেলা সদরের কোর্ট ভবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাখাওয়াত ভূঁইয়া জড়িত রয়েছেন। সাখাওয়াত এখন আরও জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দাবি করছেন। এ টাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে দিতে হবে বলে শিক্ষকদের জানিয়েছেন সাখাওয়াত।
বিন্নি দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এমদাদ হোসাইন, জয়পাশা শহীদ মফিজ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ্ জাফরিন সুলতানা, এ কে এম সামিউল হকসহ অন্তত ১৫ শিক্ষক জানান, তাঁরা ডিপিএড স্কেলের বকেয়া ভাতার জন্য হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের জুবায়েরকে তিন হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছেন।
শিক্ষক এমদাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকনেতা সাখাওয়াত ভূঁইয়া বকেয়া ভাতা পেতে হলে শিক্ষা অফিসের খরচ বাবদ প্রত্যেককে আরও ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ঘুষ দিতে হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর জুবায়ের তিন হাজার টাকা করে নিয়ে এখন মোট বিলের ২০ শতাংশ ঘুষ দাবি করছেন। বিল উত্তোলন করতে গিয়ে আমরা বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছি।’
শিক্ষকনেতা সাখাওয়াত ভূঁইয়া বলেন, ‘ডিপিএড স্কেলের ভাতার জন্য তো কিছু খরচ দিতেই হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জুবায়েদ হোসেনেরমুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।