সোনারগাঁয়ে ইউপির উপনির্বাচনে ফল ঘোষণার পর সংঘর্ষ, গুলিতে তরুণ নিহত
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে উপনির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ সময় ৮ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ফলাফল ঘোষণার পর তালা প্রতীকের প্রার্থী কায়সার আহম্মেদ ওরফে রাজুর সমর্থকদের সঙ্গে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আজিজ সরকারের সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হৃদয় ভূঁইয়া দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি কায়সার আহম্মেদের সমর্থক ছিলেন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন দুধঘাটা গ্রামের ওমর ফারুক ভূঁইয়া, মো. আপন, সাখাওয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, মো. রাশেদ ও রিপন। তাঁদের মধ্যে ওমর ফারুক ভূঁইয়াকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যেরা হলেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আবদুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও আল আমিন। তাঁরা সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ মে পিরোজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মুজিবুর রহমান মারা যান। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আজ সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট গণনায় আবদুল আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট এবং কায়সার আহম্মেদ তালা প্রতীকে ৮১১ ভোট পান। কিন্তু কায়সার আহম্মেদ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আবার ভোট গণনার দাবি জানান। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবারও ভোট গণনা করলে তালা প্রতীকের প্রার্থী আগের ভোটের সঙ্গে আরও এক ভোট বেশি পান। এ নিয়ে কায়সারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কায়সার ফলাফল মেনে নিয়ে ভোট গণনার কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, কায়সারের সমর্থকেরা বিষয়টি জানতে পেরে লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কেন্দ্র ছাড়তে বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও আনসার সদস্যেরা ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সংঘর্ষের সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হলে তাঁদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় ভাই জহিরুল ইসলামের দাবি, সংঘর্ষের সময় মোরগ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আজিজের নির্দেশে তাঁর ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি হত্যা মামলা করবেন বলে জানান।
তবে আবদুল আজিজ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তালা প্রতীকের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় গুলিতে একজন নিহত হন। তবে তাঁর পক্ষের কেউ গুলি করেননি বলে তিনি দাবি করেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ থেকে তালা প্রতীকের শতাধিক সমর্থক পুলিশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে ব্যালট ছিনিয়ে নেন। এ সময় মোরগ প্রতীকের সমর্থকেরা তালা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
পুলিস সুপার আরও বলেন, সংঘর্ষ শেষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা যায়। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, মোরগ প্রতীকের সমর্থকেরা সংঘর্ষে গুলি করেছেন। এ বিষয়ে আলাদা দুটি মামলা হবে। নিহতের ময়নাতদন্তের পর কার গুলিতে মারা গেছেন, তা বেরিয়ে আসবে।