স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় আওয়ামী লীগ নেতা, ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জায়গা পাবে না’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না।’ গতকাল বুধবার দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে এই মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য গতকাল রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে হিরু। তিনি ছাড়াও এই আসনে আরও আট প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।
উল্লেখ্য, এক সপ্তাহ আগে (২৯ নভেম্বর) এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের এক মতবিনিময় সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমন। তিনি বলেন, ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না।’ পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। পরদিন শুক্রবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দুই দফায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় ছয় দিন ধরে তিনি নরসিংদী কারাগারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মাধবদী পৌর পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান। মাধবদীর পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন প্রধানের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন, মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই বক্তব্যে সিরাজুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাহেব বক্তব্য দেওয়ার পরই পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশা আল্লাহ। এই গণজাগরণে কেউ বাধা দিতে পারবেন না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না।’ এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘হিরুর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।’
বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা কাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল ভাইয়ের হয়ে মাঠে নামব। কোনো বাধা-বিপত্তি মানা হবে না। যতই প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হোক, গণজাগরণ ফেরাতে পারবেন না। মেয়র মোশারফ হোসেন ভাই যেভাবে বলবেন, আপনারা কাল থেকে সেভাবে কাজ করবেন।’
এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কেউ কেউ তাঁর বহিষ্কারের দাবি করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন পদধারী নেতা। কোনো অন্যায় হলে তিনি ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেই পারেন, তাঁর সে স্বাধীনতাও আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাইনি। সেখানে আমরা যাঁরা ছিলাম, সবাই আওয়ামী লীগ করি। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলকে সমর্থন করে আমি ওই বক্তব্যে বলেছি, এমপি হিরুর লোক পালানোর জায়গা পাবে না।’ এমন মন্তব্যের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সিরাজুল ইসলামের ওই বক্তব্য আমি শুনেছি। তাঁর এই বক্তব্য নৌকার বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অচিরেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’