বিয়ে করতে আসছিলেন বাড়িতে, লঞ্চ দুর্ঘটনায় হলেন লাশ
এক দিন পরই বিয়ে। বাড়িতে চলছিল গায়েহলুদের আয়োজন। আত্মীয়স্বজনেরাও আসতে শুরু করেছিলেন। ছেলে তানজিলকে সঙ্গে নিয়ে লঞ্চে করে বাড়িতে ফিরছিলেন শাহ আলী মোল্যা ও ফাতেমা আক্তার। সঙ্গে ছিলেন ছেলের বন্ধুরা। সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কায় পানির ট্যাংকের নিচে পড়ে প্রাণ গেছে ছেলে ও তাঁর দুই বন্ধুর। বিয়েবাড়ির আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছে।
তানজিলদের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কেদালপুর গ্রামে। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় তাঁর সঙ্গে মারা গেছেন তাঁর দুই বন্ধু। তাঁরা হলেন জামালপুরের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী (২৩) ও টাঙ্গাইলের নাজিমউদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)। আজ রোববার ভোররাতে ঢাকা থেকে ডামুড্যাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ স্বর্ণদ্বীপ প্লাস গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্কা সেতুতে ধাক্কা খেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
তানজিলের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোসাইরহাটের কোদালপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলী ও ফাতেমা দম্পতি তাঁদের দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় থাকেন। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন শাহ আলী। আর বড় ছেলে তানজিল ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ালেখা করতেন।
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন তানজিল। সম্প্রতি তাঁর নিজ গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। আগামীকাল সোমবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আর আজ তাঁর গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। বিয়ের বাজার নিয়ে লঞ্চে করে বাড়িতে আসার পথে মারা যান তিনি।
নিহত তানজিলের ভাই ও প্রতক্ষ্যদর্শী সজিব মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসার পর আমরা সবাই দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। রাতে ভাইয়া তাঁর বন্ধুদের নিয়ে তৃতীয় তলায় যান। সেখানেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাতের দিকে হঠাৎ সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। চিৎকার শুনে আমরা দ্বিতীয় তলা থেকে সেখানে যাই। পানির ট্যাংকের নিচে ভাই ও তাঁর দুই বন্ধুকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।’
আজ দুপুরে তানজিলদের কোদালপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিয়েবাড়ির জিনিসপত্র এদিক–সেদিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। বাড়িভর্তি আত্মীয়স্বজন। মা ফাতেমা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন তানজিলের হবু স্ত্রী সাবরিনা আক্তার ও তাঁর মা মর্জিনা বেগম। তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তানজিলের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বাড়িভর্তি আত্মীয়স্বজন। বিয়ের আনন্দ করার কথা। আমার বাবাটার নিথর দেহ হাসপাতালে রেখে বাড়িতে আসছি। আল্লাহ কেন এমন করল!’ তানজিলের চাচা আলতাফ হোসেন মোল্যা বলেন, তানজিলের বাবা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম সিকদার বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হাস্তান্তর করা হয়েছে। লঞ্চের মাস্টার ও চালককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গোসাইরহাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির প্রথম আলোকে বলেন, নিহত তিন যাত্রীর দাফনের জন্য পরিবারপ্রতি ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।