সমন্বয়কদের গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মশালমিছিল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বহন করা গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মশালমিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ সোমবার রাত সোয়া নয়টার দিকেছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বহন করা গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মশালমিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সমাবেশ হয়। মিছিলে এসে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম দুটি সংহতি প্রকাশ করে।

গতকাল রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

মশালমিছিল–পরবর্তী সমাবেশে সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান শাহারিয়ার।

সমাবেশে সংগঠনটির জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে নিয়োজিত যেসব সমন্বয়ক রয়েছেন, তাঁদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে। সেসব হামলা ছিনতাইয়ের নামেই হোক বা অন্য যেকোনোভাবে হোক, আমরা এটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি যে ফ্যাসিস্টদের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরাই এসব হামলা করছে। সরকার ও প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে, তাদের বৈধতা আমাদের এই আন্দোলন ও বিপ্লবের মাধ্যমেই নির্ধারিত। তারা যদি আমাদের বিপ্লবীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বা গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের পতনও অনিবার্য। যত দিন না আমরা বিচার পাব এবং যত দিন না দেশের জনগণ নিরাপদ বোধ করবে, তত দিন আমরা রাজপথে অবস্থান করব।’

জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আহত ব্যক্তিরা যখন হাসপাতালে শুয়ে তাদের দিন পার করছেন, তখন সরকারের ব্যর্থতায় দেশব্যাপী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের দোসররা। এত বড় আন্দোলনের পরেও দেশ থেকে বিতাড়িত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তব্য দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার চেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অতি দ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের দ্রুত আইনের মুখোমুখি করতে হবে। আজকে তাদের আইনের সম্মুখীন করা হচ্ছে না বলেই বারবার ফ্যাসিস্টরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, আরিফ সোহেলের ওপর হামলা থেকে শুরু করে জাবি শিক্ষার্থী আয়ানের ওপর হুমকি একই সূত্রে গাঁথা, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে দিতে চাই, সারা দেশে যে আওয়ামী লীগের দোসররা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, তাদের সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যদি সাত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪, ১৫, ১৭ জুলাই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে কামরুল আহসানের অবস্থা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলমের মতো করতে আমরা একটুও দ্বিধাবোধ করব না।’

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে এই গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত গণ–অভ্যুত্থানের এই দাবি পূরণ না হবে, তত দিন পর্যন্ত ছাত্র–জনতা মাঠে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকবে।