‘রহস্য ভিডিও’ বানাতে উঠানে খোঁড়া কবরে সারা রাত ভিডিও ধারণ, দুই ভাই আটক
‘রহস্য ভিডিও’ বানাতে বাড়ির উঠানে খোঁড়া কবরে সারা রাত কাটিয়েছেন এক তরুণ। এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে আজ সোমবার সকালে মিজানুর রহমান (২৩) নামের ওই তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। ‘কবরের অভিজ্ঞতার’ ভিডিও ধারণের কাজে সহযোগিতার জন্য তাঁর বড় ভাই আবু হাসানকেও আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে। আটক দুই ভাই একই গ্রামের বাসিন্দা।
মিজানুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন প্রকৌশল পাস করেছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির প্রস্ততি নিচ্ছেন। বড় ভাই আবু হাসান বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি একজন ইউটিউবার। তিনি বিভিন্ন কনটেন্টের ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতেন। এ ছাড়া হেঁটে দেশ ভ্রমণের বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে বেশ আলোচিত তিনি।
শাজাহানপুর থানা–পুলিশ দুই ভাইকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানিয়েছে, ইউটিউব চ্যানেলে ভিউ বাড়াতে মৃত্যুর পর মানুষের কবরে কী ঘটে, সেই ভিডিও ধারণের সিদ্ধান্ত নেন মিজানুর রহমান। বড় ভাই আবু হাসান তাঁকে সহযোগিতা করতে রাজি হন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কবরে গুপ্তধন পাওয়ার কাহিনি বলে পরিবারের সদস্যদের কবর খুঁড়তে সহযোগিতা নেন। রোববার সন্ধ্যায় বাড়ির উঠানে কবর খোঁড়া হয়। রাত ১১টার দিকে মিজানুর রহমান সেই কবরে প্রবেশ করেন। ভিডিও ধারণের জন্য সঙ্গে নেন ক্যামেরা। অন্ধকার কবর থেকে যোগাযোগ করতে তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বাল্ব নেন। প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। গরম থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে নেন বৈদ্যুতিক ফ্যান। এ ছাড়া মুঠোফোন, চার্জার, জুস ও পানিও নেন। এরপর কবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। রাতে ভেতরে অবস্থান নেওয়া মিজানুর সেখানকার ভিডিও ধারণ করেন। বর্ণনা দেন সেখানকার পরিস্থিতির। আর বড় ভাই আবু হাসান আরেকটি ক্যামেরা নিয়ে বাইরের দৃশ্য ধারণ করেন। পাইপের মাধ্যমে এবং মুঠোফোনে চলে দুই ভাইয়ের কথোপকথন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সকালেও মিজানুর কবরের ভেতরেই ছিলেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে বাড়িতে স্থানীয় লোকজন ভিড় করেন। একপর্যায়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে একজন প্রতিবেশী থানা–পুলিশে অভিযোগ করেন। সকাল নয়টার দিকে পুলিশ সেখানে গিয়ে কবরের ভেতর থেকে মিজানুর রহমান এবং বাইরে থেকে আবু হাসানকে আটক করে।
ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাই স্বীকার করেছেন, কবরের ভেতরের রহস্য নিয়ে ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরির জন্যই তাঁরা এ কাণ্ড করেছেন। তাঁদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।