বেতনের টাকা ব্যয় করতেন মাদ্রাসা উন্নয়নে, সবার প্রশংশায় ভাসছেন অধ্যক্ষ মাওলানা কমরুদ্দীন

নিজের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ মাওলানা মো. কমরুদ্দীন চৌধুরী। গতকাল শনিবারছবি: প্রথম আলো

৩৮ বছরের শিক্ষকজীবন শেষে অবসরে গেলেন সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার হজরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. কমরুদ্দীন চৌধুরী। দীর্ঘ শিক্ষকজীবনের শুরু থেকেই নিজ বেতনের বেশির ভাগ অংশই মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করেছেন এই শিক্ষক।

গতকাল শনিবার অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে দেওয়া বিদায় সংবর্ধনার মঞ্চে এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অনেক বক্তা তাঁকে প্রশংসায় ভাসান। এমনকি আজ রোববার বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষের এমন মহানুভবতার বিষয়টি দৃষ্টান্তমূলক বলে উল্লেখ করেন।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৯৮৩ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৫ সালে যোগ দেন মাওলানা মো. কমরুদ্দীন চৌধুরী। ১৯৯৩ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হন। শিক্ষকজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমরুদ্দীন নিজ বেতনের বেশির ভাগ টাকাই মাদ্রাসায় দিয়েছেন। তাঁর বেতনের টাকা দিয়ে মাদ্রাসায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রাবাস পরিচালনায়ও ব্যয় করতেন। এমনকি মাদ্রাসার কাজে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করলেও তহবিল থেকে কোনো ভাতাও নেননি।

মাদ্রাসা ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (মো. কমরুদ্দীন চৌধুরী) নিজের প্রাতিষ্ঠানিক বেতনের অনেকাংশ মাদ্রাসার জন্য ব্যয় করেছেন। তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

মো. কমরুদ্দীন চৌধুরীকে বিদায় সংবর্ধনা বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকেই যোগ দেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী মাওলানা মো. আবদুর রকীব। সংবর্ধনা বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা বেলাল আহমদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী।

বক্তারা বলেন, কমরুদ্দীন চৌধুরী ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে সারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইলমে দ্বীনের একজন একনিষ্ঠ খাদিম। দৃঢ় নেতৃত্ব, শৃঙ্খলাবোধ, সততা ও কর্তব্যগুণে তিনি শিক্ষাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি সাফল্যের উচ্চশিখরে উন্নীত হয়েছে। এ মাদ্রাসাকে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে আসার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর ইলমের আলোয় আলোকিত হয়ে হাজারো শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করছেন। দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমুন্নত রাখতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা সবাই গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখবেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ মো. কমরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘আল্লামা ফুলতলী সাহেব কিবলাহ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ, সুন্নতে নববির আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাদ্রাসাকে বর্তমানের পরিসরে নিয়ে আসতে আমি বাবার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন ভেবে তা বাস্তবায়নে রূপ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এ মাদ্রাসার প্রতিটি ধূলিকণার সঙ্গে আমার যে আত্মার সম্পর্ক এত দিন ছিল, তা চিরদিন অব্যাহত থাকবে, ইনশা আল্লাহ।’

আজ রোববার সন্ধ্যায় সদ্য বিদায়ী এই অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদ্রাসাটিকে সেরা একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে কাজ করেছি। তবে কী কী করেছি কিংবা বেতনের টাকা মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করেছি, এসব বলতে সংকোচ হয়। শুধু এটাই বলব, আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবে না।’

সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষের শিক্ষার উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকার বিষয়ে অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস ইউ মারজান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কর্মজীবনে মাদ্রাসা থেকে কোনো দিন বেতন নেননি। এমনকি সরকারি বেতনের পুরোটা তিনি মাদ্রাসায় দিয়ে দিতেন। শুধু তা–ই নয়, মাদ্রাসার কাজে ঢাকাসহ যেকোনো জায়গায় যাতায়াত করলে মাদ্রাসা থেকে যাতায়াত খরচ নিতেন না। নিজের পকেট থেকে এসব খরচ করতেন।’