কুড়িগ্রামে কারাগারে কয়েদির মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ পুলিশি নির্যাতনের

একরামুল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে একরামুল হোসেন ওরফে এরশাদ (৩৫) নামের এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে কারাগারের হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই কয়েদিকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। একরামুল কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারী এলাকার শওকত আলীর ছেলে।

একরামুলের পরিবারের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের সময় একরামুল সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে গ্রেপ্তারের দিন রাতে ভূরুঙ্গামারী থানায় পুলিশ তাঁকে নির্যাতন করে। এর জেরে দুই দিন পর অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার আবু ছায়েম প্রথম আলোকে বলেছেন, থানা থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় একরামুলের সঙ্গে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে চিকিৎসাপত্র ছিল তাতে লেখা ছিল ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট’ (শারীরিক নির্যাতন)।

তবে টাকা দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি নজরুল ইসলাম। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী হওয়ায় একরামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কয়েদি একরামুল হোসেনের পরিবার, থানা-পুলিশ ও কারাগার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে মাদক ব্যবসার অভিযোগে একরামুলকে আটক করে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ। ওই সময় তাঁর কাছে মাদকদ্রব্য না পেলেও ১৫১ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কারাগারে নেওয়ার পর একরামুলের সঙ্গে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি চিকিৎসাপত্র ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ একরামুলকে কারা হাসপাতালে রাখে। সেখানে গতকাল বিকেলে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

থানা থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় একরামুলের সঙ্গে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে চিকিৎসাপত্র ছিল তাতে লেখা ছিল ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট’ (শারীরিক নির্যাতন)।
আবু ছায়েম, জেলার, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার

একরামুল হোসেনের বোন শিউলি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে আমার ভাইকে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওই সময় তাঁর কাছে কোনো মাদক ছিল না। আমার ভাই এখন আর মাদকসেবন করে না। সে মাছ চাষ করে সংসার চালায়। কিন্তু তাকে ধরে নেওয়ার পর ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে ৪০০ ইয়াবা দিয়ে আমার ভাইকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। আমরা টাকা দিতে দেরি করায় তারা আমার ভাইকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে আমরা ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ওসিকে ও তাঁর সহযোগী এএসআই রাজুকে দিলেও তারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেয়নি। বুধবার দুপুরে আমার ভাইকে আটক করলেও পুলিশ রাতভর আমার ভাইকে নির্যাতন চালিয়ে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠায়। পুলিশের নির্যাতনের ফলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।’

ওসি নজরুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, একরামুল হোসেন এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। তাঁর নামে থানায় সাতটি মামলা আছে। মাদক কেনাবেচার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে বুধবার আটক করা হয়। আটকের পর তাঁকে ১৫১ ধারায় মামলা দিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তবে তাঁকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাপত্রের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘যখন ধরতে যাই তখন সে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পড়ে যায় এবং আঘাত পায়। এ জন্য তাঁকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া থানায় তাঁর ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি।’ একরামুলের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানান ওসি।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে টাকা দাবি করার বিষয়ে ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমরা যদি টাকা দাবি করতাম নিশ্চয়ই একরামুলের মৃত্যুর আগে তারা এই তথ্য ফাঁস করত। মৃত্যুর পর ঘটনাকে অন্য দিকে নিতে তারা এই মিথ্যা অভিযোগ করছে।’

আজ সকাল ১০টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার আবু ছায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর সময় ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট লেখা হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র ছিল। তারপর আমরা তাকে কারা হাসপাতালে রেখেছিলাম। গতকাল দুপুরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’