চেয়ারম্যান পদে দুজনের সমান ভোট, মধ্যরাতে লটারিতে বিজয়ী ঘোষণা
ভোট গণনা করে দেখা যায় পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে দুজন সমান ভোট পেয়েছেন। সন্ধ্যায় কাউকে বিজয়ী ঘোষণা না করে প্রাপ্ত ভোটের তথ্য দিয়ে রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, ‘দুজন প্রার্থীর মধ্যে টাই হয়েছে। কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা সম্ভব হলো না। ধন্যবাদ সবাইকে।’ হঠাৎ রাত নয়টার দিকে সিদ্ধান্ত আসে সমান ভোট পাওয়া দুজন প্রার্থীর মধ্যে লটারি হবে। যার প্রতীক ও নাম উঠবে, তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। রাত ১টা ২০ মিনিটে লটারিতে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটেছে। লটারিতে আবদুল মান্নান বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সমান ভোট পাওয়া অন্য প্রার্থী ফারুক আলম আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লটারি বৈধ প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই প্রার্থীর উপস্থিতি এবং স্বাক্ষরে লটারি করার বিধান রয়েছে। তাঁদের অনুপস্থিতে কোনো লটারি হতে পারে না। আমি হারিনি। আমাকে হারানো হয়েছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’
গতকাল শনিবার রিফায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। বেশির ভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, মোট ভোটার ২৫ হাজার ৮৪৬ ভোটের মধ্যে বৈধ ভোট পড়ে ১৭ হাজার ৮১৩ ভোট। বাতিল হয় ১১৩ ভোট। প্রার্থীদের মধ্যে আবদুল মজিদ পান ১৮ ভোট, আবদুল মান্নান বিশ্বাস ৬ হাজার ১২৩ ভোট, জামিরুল ইসলাম ৪ হাজার ৯১ ভোট, ফারুক আলম ৬ হাজার ১২৩ ভোট এবং মেহেদী হাসান ৬৩৬ ভোট পেয়েছেন। ঘোড়া প্রতীকের আবদুল মান্নান বিশ্বাস (স্বতন্ত্র) ও মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম (স্বতন্ত্র) দুজন ৬ হাজার ১২৩ ভোট পান।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল ভোট প্রাপ্তির তথ্য দেন। তবে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি। রাত সাড়ে নয়টার পর জানানো হয় সমান ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দুই প্রার্থীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। দুই প্রার্থীকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে এ নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম রাত ১০টার দিকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। তিনি জানান, অবৈধ ঘোষণা করা ভোটগুলো পুনরায় যাচাই–বাছাই করা হোক। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। তবে সেখানে অপর প্রার্থী আবদুল মান্নান উপস্থিত হননি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও মো. ওবায়দুল্লাহ, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার, ওসি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। রাত একটা ১০ মিনিটের দিকে লটারি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে ফারুক আলম সেই সিদ্ধান্তের কাগজে সই না করে কক্ষ থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বের হয়ে যান।
দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে রাত ১টা ২০ মিনিটে একটি সাদা বয়ামের ভেতর দুটি ভাঁজ করা চিরকুট রাখা হয়। এক ব্যক্তির চোখ মাফলার দিয়ে বেঁধে ঢাকা হয়। তিনি এক হাত দিয়ে একটি চিরকুট তোলেন। সেই চিরকুটে লেখা নাম ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি আবদুল মান্নান বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০–এর বিধি ৪১ (৬) মোতাবেক দুজন প্রার্থীর মধ্যে লটারি করা হয়েছে। লটারির ফলাফল যে প্রার্থীর পক্ষে গেছে, তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। লটারি করার সময় উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আরও ছয়জন নিরপেক্ষ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টির ভিডিও ধারণ করাও আছে।’