উড়োজাহাজ দেখেই চড়ার শখ জাগে ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটির
রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিংমল এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় উড়োজাহাজ দেখে তাতে চড়ার শখ জাগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটির। বসুন্ধরা থেকে বাসে চড়ে প্রথমে সে বিমানবন্দর এলাকায় যায়। সেখানে ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে সে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে।
শিশুটির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। আজ শুক্রবার সকালে শিশুটির গ্রামে গিয়ে কথা বললে শিশুটি এসব তথ্য জানায়। ১২ বছর বয়সী ওই শিশু বলে, ‘বসুন্ধরা শপিংমল এলাকায় যাওয়ার পর বিমান উড়তে দেখেই বিমানে চড়ার শখ জাগে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর গাড়ি থেকে বিমানবন্দর বলে ডাকতে থাকে। ওই গাড়িতে উঠে বসি। বিমানবন্দরের সামনে যাওয়ার পর নামি। এরপর ওখানে ঘোরাঘুরি করে বিমানবন্দরে ঢুকি।’
শিশুটি জানায়, প্রথম ফটক দিয়ে ঢোকার সময় তার কাছে কেউ কিছু জানতে চায়নি। দ্বিতীয় ফটকে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানতে চান, তার মা–বাবা কোথায়? তখন সে সামনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে। তখন তিনি তাকে যেতে দেন। আর কোথাও তাকে বাধা দেওয়া হয়নি।
শিশুটি বলে, ‘আমার সামনে কয়েকজন হুজুর যাচ্ছিলেন। আমি তাঁদের পেছন পেছন গিয়ে বিমানে উঠি। বিমানে তখন কয়েকজন পেছনের দিকে বসা ছিলেন। আমি মাঝের দিকে বসি। তখন মাঝে কেউ ছিল না। সিটে বসার পর সামনে দেখি টিভি (মনিটর), পাশে গোল একটা সুইচ। সেখানে চাপ দিলে টিভি অন (চালু) হয়, তখন স্পাইডারম্যান কার্টুন দেখি।’
শিশুটি আরও বলে, কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি এসে তাকে বলে, ‘এই সিট আমার, তুমি তোমার মা–বাবার কাছে গিয়ে বসো।’ এরপর কেবিন ক্রুরা তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আসনে বসতে বলেন। সে একা এসেছে জানালে তাঁরা পাসপোর্ট, টিকিট দেখতে চান। ভয়ে সব খুলে বললে তাঁরা শিশুটিকে নামিয়ে নিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়েছিল শিশুটি। রাত সোয়া তিনটার দিকে ওই ফ্লাইট উড্ডয়নের কথা ছিল। বুধবার সকালে শিশুটিকে বিমানবন্দর থানা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে বাড়ির সামনে ইজিবাইক থেকে নেমে চাচার ঘরে ঢুকলেও শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বেলা একটার দিকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খুঁজে এনে শিশুটির পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে তাকে বুঝিয়ে শিকল খুলে দেওয়া হয়।
শিশুটির বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি জানান, ছেলের বয়স যখন দেড় বছর, তখন তাঁর স্ত্রী তাঁদের ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। ছেলে মায়ের কথা ভুলতে পারত না। একা একা তাঁর কাছে চলে যেত। ছেলেকে স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন। সেখান থেকেও কয়েকবার পালিয়েছে। তিনি ও তাঁর ছোট ভাই তাকে খুঁজে নিয়ে আসতেন। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
ছেলের সন্ধানে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেও কয়েকবার বাড়ি থেকে, মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছে। ভেবেছিলাম এবারও তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। যার জন্য থানায় জিডি করিনি।’ তিনি বলেন, ‘ছোট থাকতে মা ছেড়ে গেছে। পরিবার থেকে আমরা তাকে পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করেছিলাম। সে পড়ালেখা করতে চায় না।’
পায়ে শিকল দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘এবার পালানোর আগেও পালানোর চেষ্টা করেছিল। মুকসুদপুর পর্যন্ত চলে যায়। আমি সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে পায়ে শিকল বেঁধে রাখি। আমি কাজে গেলে আমার মা শিকল খুলে দেয়। বুধবার সকালে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার পরও সে পালিয়েছে। আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খুঁজে এনে পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছিলাম। পরদিন আর পালাবে না বলার পর শিকল খুলে দিই। আমি মনে করেছিলাম, কয়েক দিন ঘরের ভেতরে থাকলে পালানোর প্রবণতাটা কমবে।’
নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে শিশুর ফ্লাইটে উঠে পড়ার ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে।