‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২৪-এর আঞ্চলিক গণিত উৎসব গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। প্রথম দিন রংপুর ও কুষ্টিয়া আঞ্চলিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসব আয়োজন করছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, পৃষ্ঠপোষকতায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। আয়োজনে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিন অংশ নিয়েছে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী এবং কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা—এ ৯ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
কুষ্টিয়ায় কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা মনে হচ্ছিল ভোরের মতো। কনকনে শীতে অনেকটাই বিপর্যস্ত জনজীবন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গণিত উৎসবে অংশ নিতে। সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
উৎসব উদ্বোধন করেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার উপব্যবস্থাপক সামসুর রহমান আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন। ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের (আইজিএস) গানের দল জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। উৎসবে অংশ নিয়েছে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এই শীতের সকালে কুয়াশায় ঘেরা স্কুলে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছে জীবনকে আলোকিত করতে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তোমরাই এই দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তোমরাই।’
উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত হয় এক ঘণ্টার পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে একদিকে পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলে, অন্যদিকে মাঠে টানানো শামিয়ানার নিচে বন্ধুতা পর্ব ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়ে অনুষ্ঠান চলে। এ পর্ব আইজিএস স্কুলের শিক্ষার্থীদের গণিতের গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর একে একে সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহমুদা আক্তার, রওশন আরা সোহেলী, রনজিৎ কুমার রায়।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকসারিতে বসা শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মঞ্চে থাকা বিশিষ্ট গণিতবিদসহ পদার্থ, রসায়ন, কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকেরা। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের মজার মজার প্রশ্নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, যদি এক বছর সূর্য না ওঠে, তাহলে আমাদের কী কী ক্ষতি হবে? পাইয়ের মান কেন দশমিকের পর চারঘর পর্যন্ত নেওয়া হয়? পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপমাত্রা ও সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা কী একই রকম?
প্রশ্নোত্তর পর্বে মঞ্চে ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক বিজন মোহন চাকী, শঠিবাড়ী ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিক প্রধান। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভালো প্রশ্নের জন্য পুরস্কার হিসেবে শিক্ষার্থীদের কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা ম্যাগাজিন দেওয়া হয়।
উৎসব সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক জাহিদ হোসাইন খান। আর প্রশ্নোত্তর পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর তুরাব হক (পায়েল)।
দুপুরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়ার আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকেরা ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ, ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের চেয়ারম্যান সেরাফুল হোসেন, রংপুর জিলা স্কুলের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক গাজী সালাউদ্দিন, প্রথম আলো রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক, বন্ধুসভা সভাপতি আরিফ হাসান প্রমুখ।
উৎসবে রংপুর জিলা স্কুলকে ভেন্যু স্মারক দেওয়া হয়। সর্ব শেষ লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ৪ ক্যাটাগরিতে ৬০ জন বিজয়ী হয়। তাদের ঢাকা জাতীয় গণিত উৎসবে যোগদানের মেডেল পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয় চিঠি ও টি-শার্ট।
কুষ্টিয়ায় দিনভর আনন্দ-উচ্ছ্বাস
কুষ্টিয়া জিলা স্কুল প্রাঙ্গণ সকাল থেকে দিনভর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে খুদে গণিতবিদেরা। সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায় ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর রহমান।
উদ্বোধনী পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক লাল মোহাম্মদ, কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুজ্জামান (ডাবলু) ও প্রথম আলো কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান।
উৎসবে অংশ নেয় ৮৩০ শিক্ষার্থী। উৎসবে গণিত অলিম্পিয়াড, দ্বিমিক প্রকাশনী ও প্রথমা প্রকাশনীর স্টলও বসেছিল। স্টলগুলো ঘুরে দেখেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। পাবনা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার ফাইয়াজ বলে, গণিত তার পছন্দের বিষয়। কিন্তু খানিকটা ভয় রয়েছে। এই ভয় দূর করতেই সে উৎসবে এসেছে।
উদ্বোধনের পর গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষে বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বও। গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আসা একাডেমিক দলের সদস্যরা নানা প্রশ্নের জবাব দেন। পাশাপাশি চলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ। দুপুরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলকে ভেন্যু স্মারক দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ, মাদক ও মিথ্যাকে না বলার শপথ করান প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক।
বেলা তিনটায় প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। চার ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয় ৫৩ জন। তারা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় উৎসবে অংশ নেবে।