চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ভ্যানচালক মজনু মিয়াকে (২৮) হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তাঁর ফুফাতো ভাই জব্বার মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, এনজিওর কিস্তির সাড়ে ৬ হাজার টাকা জোগাড় করতে মামাতো ভাই মজনু খাঁকে হত্যা এবং তাঁর ভ্যান ও মুঠোফোন বিক্রির পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি মজনুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কীটনাশক মেশানো কোমল পানীয় পান করিয়ে হত্যা করেন। মুঠোফোনটি বিক্রি করলেও ভ্যান বিক্রির আগেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
জীবননগর আমলি আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম গতকাল রোববার বিকেলে জব্বারের ১৬৪ ধারায় দেওয়া এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাঁকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার আদালত পরিদর্শক নাসির উদ্দিন মৃধা আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জব্বারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত মজনু খাঁর মুঠোফোন ও ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়।
জব্বার মিয়া মজনু হত্যা মামলার একমাত্র আসামি। তিনি উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে। নিহত মজনু মিয়া একই গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে।
জব্বার মিয়ার জবানবন্দি ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মজনু খাঁ ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সারা রাত বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনেরা খোঁজ করতে থাকেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে পার্শ্ববর্তী মনোহরপুর গ্রামের মোশারফ গাইনের পানের বরজের পাশে নিস্তেজ অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। সে সময় মজনুর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মজনু খাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে তাঁর বাবা হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। তবে জীবননগর থানায় তাঁর মামলার আবেদন ২১ ফেব্রুয়ারি অপমৃত্যু মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান তাঁকে আশ্বস্ত করেন, শিগগিরই মজনুর মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করবেন এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশ জানায়, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানের নেতৃত্বে জব্বার মিয়াকে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আটক করা হয়। জব্বারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত মজনু খাঁর মুঠোফোন ও ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। এরপর থানায় নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার মিয়া বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি চরম বিপদগ্রস্ত। চলতি মাসের কিস্তির ৬ হাজার ৫০০ টাকা জোগাড় করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি মামাতো ভাই মজনুকে হত্যা এবং তাঁর ভ্যান ও মুঠোফোন বিক্রির পরিকল্পনা করেন।