ময়মনসিংহে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অভিযানের পর ফয়সাল খান নামের এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় সাত দিনেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে ক্ষোভ বাড়ছে ফয়সালের স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে পুলিশ বলছে, তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।
ফয়সাল খান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি।
ফয়সালের ভগ্নিপতি মোহসিনুল হক বলেন, ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি, দেখা করছি। আসামি ধরতে যে কী সমস্যা, তা বুঝতে পারছি না। পুলিশ শুধু বলছে, ধরার জন্য চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টাটা কোথায়, কীভাবে করছে—তা বুঝতে পারছি না। ঘটনাটিতে পুলিশের ভূমিকা সবারই জানা।’
ঘটনা প্রসঙ্গে ফয়সালের স্বজনেরা বলেন, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে তরুণীর বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরে ওই বাসার সামনে ফয়সালকে অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীদের দাবি, ওই অভিযানের সময় তরুণীর এক খালাতো ভাই ও অজ্ঞাত পরিচয় আরেক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি। অভিযানে তাঁদের সঙ্গে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে ফয়সালের মৃত্যুর ঘটনায় ১২ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন ফয়সালের বাবা সেলিম খান। এতে ওই তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাদ থেকে ৬০ ফুট নিচে ফয়সালকে ফেলে দেন। ওই অভিযান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাসার নিচ থেকে ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এখন পর্যন্ত আসামি ধরতে না পারার কারণ জানতে চাইলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল হক জানান, তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
অভিযানে ডিবি পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ঘটনাটিতে ‘পুলিশের ব্যত্যয়’ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আজ বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার কথা আছে।