রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রীকে গালিগালাজ ও ধর্ষণের হুমকি, ছাত্রকে মারধর, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের পদধারী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) দুই শিক্ষার্থী মানসিক নির্যাতন ও মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ছাত্রলীগের দুই নেতার নেতৃত্বে তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি একজনকে মারধর এবং অপরজনকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের সভাপতির কাছে ওই দুই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইনস্টিটিউটের অভিযোগ তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক শেফা এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান এতে নেতৃত্ব দেন। তাঁরা একই ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্র তৃতীয় ব্যাচ ও ভুক্তভোগী ছাত্রী পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
অভিযোগের বিষয়ে সোমবার বিকেলে ছাত্রলীগের নেত্রী আতিফা হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের নেতা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগকারীরা তাঁদের ব্যাচ ধরে নানা ধরনের কথা বলে আসছিলেন। বড়দের গোনার সময় নেই, এমন। পরে তাঁদের ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। সেখানে একসঙ্গে বসলে যা হয় আরকি। হয়তো একটা রাফ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কাউকে হুমকি বা মারধর করা হয়নি। এখন তাঁরা কৌশলে অডিও করে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন।
ইনস্টিটউটের তৃতীয় ব্যাচের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকতার বানুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি জানি না। তোমাদের কে বলল? না আমরা এ রকম কিছু শুনিনি। যদি এ রকম কিছু হয়েও থাকে, তা ডিপার্টমেন্টের ইন্টারনাল (বিভাগের অভ্যন্তরীণ) ব্যাপার, ডিপার্টমেন্ট দেখবে। তোমাকে কেন বলতে হবে? এ রকম কিছু হলে তারা দরখাস্ত দেবে। দরখাস্ত দিলে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক আছেন, তাঁরা দেখবেন। এসব পেপারে (গণমাধ্যমে) দেওয়ার মতো ঘটনা নয়।’
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, কিছুদিন ধরে তিনি ইনস্টিটিউটের কয়েকজন বড় ভাইবোনের মাধ্যমে ক্রমাগত মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর ইনস্টিটিউটের একজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। সেখানে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, ইতি মণ্ডল, শাহবাজ তন্ময়, আতিফা হক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সেখানে নানাবিধ অশালীন কথাবার্তা ও অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। পরে তাঁরা আরও নানাভাবে মানসিকভাবে হেনস্তা করতে থাকেন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, রোববার তাঁকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য আতিকুর ও আতিফা চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বিভাগের সামনের চায়ের দোকানে যান। সেখানে তাঁর চরিত্র নিয়ে নানা রকম গালিগালাজ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা অন্য সহপাঠীদেরও হেনস্তা করা হয়। তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি এবং ক্যাম্পাসে তাঁর টিকে থাকা অসম্ভব করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
ওই ঘটনার অডিও রেকর্ডে আতিফা হককে বলতে শোনা যায়, ‘ওকে হলে গিয়ে ধরব। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচের মানুষের সাথে ও ঘুরে বেড়িয়েছে। ওকে প্রোটেকশন দিলে ওর লাইফ আরও দুর্বিষহ করব। ওর ক্যারেক্টার যদি আমি না... তাহলে আমার নাম শেফা না। ওকে যেখানে পাব সেখানে...।’
ওই ছাত্রীর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া শিক্ষার্থীও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সোমবার ইনস্টিটিউটে দেওয়া লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে র্যাগিংয়ের একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা আতিকুর রহমান।
এই ঘটনার বিচার দাবি করে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আমি সিনিয়র কর্তৃক র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছি। এ ছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। এগুলো নিয়ে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
অধ্যাপক আকতার বানুর কাছে অভিযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছি না। তাঁরা ওই দিন আটকে রেখে আমার শিক্ষকের ক্লাস পর্যন্ত করতে দেননি। আমার সহপাঠীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমাকে যেভাবে অশালীনভাবে বলা হয়েছে, তা আমি বলতে পারছি না।’ ঘটনার প্রমাণ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।