ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, ছড়াচ্ছে উত্তাপ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত। কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিবাদ চলছে।
আগামী শনিবার জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা। তবে আজ সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করে ১৮ জানুয়ারি করা হয়েছে। সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়েছে উত্তাপ।
সম্মেলন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ বলছে, জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হবে না। অপর পক্ষের ভাষ্য, তাঁরা তো বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিই মানেন না।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১০ আগস্ট জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি পক্ষ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ দূর না করেই গত ২ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এতে আগের পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলকে ১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। আগের কমিটির ২, ৩ ও ৪ নম্বর সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে নতুন কমিটিতে যথাক্রমে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। কমিটিতে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে ৩২ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। কবির আহমেদ ভূঁইয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান সানির বড় ভাই এবং আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হতে চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, ৩২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া ২৬ নেতাই কবির আহমেদ ভূঁইয়ার অনুসারী। বাকি চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে একাধিকবার প্রার্থী হওয়া খালেদ হোসেনের অনুসারী। খালেদ হোসেনের অনুসারীদের কমিটিতে না রাখায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, তারা জেলা বিএনপির দল নয়, একটি লিমিটেড কোম্পানি চালাচ্ছে। সম্মেলনের বিষয়ে জেলা বিএনপির সার্বিক পরিস্থিতি তুলে লিখিতভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুকে বিষয়টির দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে ২৮ ডিসেম্বর সম্মেলন হচ্ছে না, স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনের কোনো ‘কারিকুলাম’ তারা মানছে না। ত্যাগী ও দুর্দিনে মাঠে থাকা নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে তারা নিজেদের মনগড়া ভোটার তালিকা করেছেন।