রায় ঘোষণার পর আসামিদের ঔদ্ধত্য, ভি চিহ্ন প্রদর্শন

রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর ভি চিহ্ন দেখান। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতেছবি: জুয়েল শীল

১২ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার রায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই আদেশে আরও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় দেন। সাজা হওয়া আসামিদের সবাই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। তাঁদের সবাই বহিষ্কৃত।

রায় ঘোষণার পর কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় আদালতের বারান্দায় ঔদ্ধত্য দেখান আসামিরা। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর ভি চিহ্ন দেখান। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন আসামিও রায়ের আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তুলে কারাগারে নিয়ে যান।

ইকবাল আজাদ সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘প্রভাবশালী’ নেতা ছিলেন। ইকবাল আজাদের স্ত্রী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অশোক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া খালাস পেয়েছেন ১৩ জন। মামলায় মোট আসামি ছিলেন ২৯ জন। এর মধ্যে দুজন মামলা চলার সময় মারা যান।

আদালত সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চার আসামি হলেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর; উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি মাহফুজ আলী, মোকারম আলী এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার ইসমত আলী।

খুন হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ
ছবি: সংগৃহীত

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, মো. সিজার, সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী মো. বাবু, মো. হারিস, মো. বকুল, মো. লিমন, মো. আবদুল্লাহ, মো. শরীফ ও মো. মিজানুর রহমান। বাকি ১৩ আসামি খালাস পান।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠনের জেরে খুন হন ইকবাল আজাদ। তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির গতি রোধ করে তাঁকে ছুরিকাঘাত, বল্লম দিয়ে আঘাত ও কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আজাদ বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা করেন। দুই মাস পর ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ আরও সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে।

আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসায় মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ইতিমধ্যে ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ফেরত যায়। সেখান থেকে আবার মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। গত সোমবার এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত আজ বুধবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ওই দিন এ মামলায় জামিনে থাকা ১৯ আসামির জামিন বাতিল করে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। ১২ জনের সাক্ষ্য শেষে আদালত এ রায় দেন।

আজ রায় ঘোষণার আগে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসেন নিহত আজাদের স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ ও তাঁর মেয়ে। রায় ঘোষণার পর তাঁরা দুজন কান্নায় ভেঙে পড়েন।