রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে হট্টগোল
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে হট্টগোল হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের গণকপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ২০ মিনিট ধরে চলা এই হট্টগোলের ঘটনায় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন— ‘আমার দল নেই।’
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপন নির্বাচনের ৩৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের রাজশাহী মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন। ইশতেহার পড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রার্থী। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার ঠিক আগে একজন সাংবাদিক উপস্থিত নেতাদের নাম-পরিচয় জানতে চান। তখন সালাউদ্দিন উপস্থিত নেতাদের নাম–পরিচয় বলতে থাকেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার আহ্বায়ক আবুল হোসেনের পদবি না বলায় আপত্তি জানান আবুল হোসেন। তিনি দাবি করেন, তিনি বর্তমান চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়।
প্রার্থী সাইফুল ইসলাম তাঁদের বারবার থামতে বলেন। একপর্যায়ে তিনিও হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উপস্থিত অন্তত ৩০ নেতা-কর্মীর প্রায় সবাই উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে থাকেন। কেউ থামতে বলেন, কেউ নানা রকম অভিযোগ করতে থাকেন। মেয়র প্রার্থী বেশি উত্তেজিত হলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলার সদস্যসচিব শামসুদ্দিন ও কর্মীরা প্রার্থীকে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে রিকশায় উঠিয়ে দেন। অবশ্য ১৫ মিনিট পর প্রার্থী আবার আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।
ঘটনার বিষয়ে শামসুদ্দিন বলেন, ‘আবুল হোসেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। সালাউদ্দিন উপদেষ্টা পদবির কথা বলেননি। দুজনের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে।’
আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। আমার পরিচয় শুধু সঠিকভাবে বলতে বলেছি।’
সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে উপদেষ্টা হিসেবে একজনের নাম আছে। তিনি হলেন রাজশাহী জেলার সাবেক আহ্বায়ক রাহাত হোসেন। আমি তাঁর পদবি বলেছি। কিন্তু আবুল হোসেনের বলিনি। আবুল হোসেন দাবি করছেন তিনি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো চিঠি নেই। এই পদবি না বলায় তিনি মনঃক্ষুণ্ন হন।’
কর্মসংস্থান তৈরিসহ ৩৬ দফা
৩৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। ইশতেহারে তিনি বেকার সমস্যা নিরসনে যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজশাহীতে চামড়া শিল্প, আম, পেঁয়াজসহ কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যা রাজশাহীকে কর্মসংস্থানের নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া সিটিতে থাকা বাড়ির ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখা, পাড়া–মহল্লায় পরিকল্পিত উন্নত মানের রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ, নাগরিকদের নিরাপত্তায় প্রতিটি পাড়া–মহল্লার রাস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, প্রতিটি মসজিদের ইমাম–মোয়াজ্জিনকে সম্মানজনক ভাতা প্রদানসহ মসজিদে সহিশুদ্ধ কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, মুসলিম ছেলেমেয়েকে মসজিদে বিনা মূল্যে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা; প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
লিখিত ইশতেহার পাঠ করে সাইফুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজস্ব অর্থায়নে একটি করে আধুনিক স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে সিটি করপোরেশনের স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। স্থায়ী গরিব-অসহায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গর্ভকালীন সময় থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে সিটি করপোরেশন থেকে গর্ভকালীন ভাতা দেওয়া হবে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রেলস্টেশনসহ অন্য সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে দালালমুক্ত করা হবে।
সাইফুল ইসলাম প্রতিশ্রুতিতে আরও উল্লেখ করেছেন, রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। রাজশাহীতে কার্গো বিমান চালুর ব্যবস্থা করা হবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ফুটপাত দখলমুক্ত করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে।
জাতীয় পার্টির গণসংযোগে নৌকার স্লোগানের ব্যাখ্যা
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির গণসংযোগে নৌকার স্লোগান দেন দলটির মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি বলেন, এবার বহু দিন পর লাঙ্গল এসেছে। লাঙ্গলই জনগণের মঙ্গল। একপর্যায়ে তিনি বলে ফেলেন ‘নৌকা আছে’, পাশে থাকা কর্মী–সমর্থকেরা বলে ওঠেন ‘নৌকা আছে’।
সালাউদ্দিন বলেন, ‘সেদিন বলেছিলাম নৌকা আছে। সমর্থকদের বলার কথা ছিল, নৌকা নেই। কিন্তু তারা বলেছে, নৌকা আছে। এরপর বলার কথা ছিল, লাঙ্গল আছে। কর্মীদের বলার কথা ছিল, লাঙ্গল আছে। কিন্তু সমর্থকেরা একটি জায়গায় ভুল করে ফেলে।’
ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চাভিলাষী চিন্তা বাদ দিলে সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের দেওয়া ট্যাক্সেই সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ইশতেহার ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সর্ববৃহৎ শক্তি নিয়ে রাজশাহীতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে নেমেছে। দল ও সাধারণ মানুষ সঙ্গে আছে। তাঁরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হবেন।
হট্টগোলের পর দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাফ চাই। ক্ষমা চাই। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এখন পর্যন্ত ইশতেহার ঘোষণা করেননি জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার। তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, তিনি অন্য প্রার্থীদের মতো ইশতেহার দেবেন না। যে বিষয়গুলো নির্বাচিত হলে পূরণ করতে পারবেন, তা–ই ঘোষণা দেবেন।