ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আতঙ্কে বরগুনার উপকূলের বাসিন্দারা

বিষখালী নদীর তীরবর্তী বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের জিনতলা গ্রামে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। তাই এই গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আজ সোমবার সকাল থেকে বরগুনার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টি বাড়তে থাকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলের বাসিন্দারা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার সব নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে বরগুনা নদীবন্দর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

বরগুনা সদর উপজেলা মাঝের চরের বাসিন্দা জব্বার বলেন, ‘বাঁধ না থাকায় প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে পুরো চর জোয়ারে  ভাসে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। ফসলের খেতও নষ্ট হয়। আমরা দীর্ধদিন ধরে একটা বাঁধের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। যখন থেকে  ঘূর্ণিঝড়ের খবব শুনেছি, তারপর থেকে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে।’

তালতলী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সকাল থেকেই মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে। মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

বরগুনা সদর উপজেলার সিপিপির টিম লিডার জাকির হোসেন বলেন, জেলার বামনা ও বেতাগী উপজেলা ছাড়া বাকি চার উপজেলায় ৮ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ–পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রস্তুত আছেন। তাঁরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেলায়  রেডক্রিসেন্টের ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক আছেন। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাযালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগকালে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৬৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী সময় মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য জেলার ৪২ ইউনিয়নে ৪২ মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য জেলায় ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার কার্টন শুকনা খাবার ও ৭০০ প্যাকেট বিস্কুট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।