যশোরে পুলিশের লাঠিপেটায় ২০ শিক্ষার্থী আহত, ৪ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধন কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের লাঠিপেটা ও ধাওয়ায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খানসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। পরে অবশ্য সমন্বয়ক রাশেদ খানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
তুলে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ, যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান, রিয়াতুল ও রনি।
পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হুইলচেয়ারে করে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সিনথিয়া রেজা। এ সময় তাঁর চারপাশে আহত শিক্ষার্থী একই কলেজের আরিশা জান্নাত, ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার, যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী কান্তা আক্তারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ৯ দফা দাবিতে আজ বেলা ১১টায় যশোর প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে তাঁদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচিস্থলে জড়ো হলে পুলিশ সেখানে গিয়ে সমন্বয়ক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খানকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেয়। তাঁরা তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ির পিছু পিছু যান। এ সময় আন্দোলনরত আরও চারজনকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ। এতে মানববন্ধন কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তাঁরা আবার ধর্মতলা এলাকায় জড়ো হলে কোনো ধরনের স্লোগান ও উসকানি ছাড়াই পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যরা আটকের ভয়ে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, এ পর্যন্ত যশোরে কোনো সহিংসতা হয়নি, তাই তাঁরা আজ রজনীগন্ধা ফুল হাতে কর্মসূচিতে এসেছিলেন। ওই ফুল পুলিশকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ উল্টো তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। মেয়েদের গায়ে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়েছেন। সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন না। তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
লাঠিপেটা ও শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, কাউকে লাঠিপেটা করা হয়নি। বাঁশি বাজিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। ভয়ে দৌড়াদৌড়ির সময় ও বোরকায় জড়িয়ে পড়ে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থী আহত হতে পারেন। পুলিশ কাউকে তুলে নেয়নি।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলা করে মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এই আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না। ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন না। রাজপথের আন্দোলন চলছে, চলবে।