হাসিনা ও তাঁর দোসরদের পুনর্বাসনের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরাও ফ্যাসিস্টদের দোসর: সারজিস আলম
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনা ও তাঁর দোসরদের বিচারের কথা না বলে তাঁকে ও তাঁর দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরাও ফ্যাসিস্টদের দোসর। এ সময় আর কোনো ফ্যাসিস্টকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে দেওয়া হবে না। যে নবজাতক শিশু জন্ম নেওয়ার আগেই বাবা হারাল, তাকে আমরা কী জবাব দেব? আমার অনেক বোন আছেন, যাঁদের বিয়ে হওয়ার কয়েক দিন পর স্বামী হারিয়েছেন। তাঁদের সারা জীবন কীভাবে কাটবে? আমরা সহজে সব ভুলে যাই। ১৬ বছরের অত্যাচার ভুলে যাই। গুম, খুন, হত্যা ভুলে যাই। কিন্তু এ দেশের ছাত্রসমাজ এবার আর ভুল করবে না। আমরা সব হত্যার বিচার নিয়েই ঘরে ফিরব। আর কোনো ফ্যাসিস্টকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে দেওয়া হবে না।’
আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণকালে এসব কথা বলেন সারজিস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা সারা জীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিলেন। যেখানে গেছেন, সেখানেই তাঁর পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। তাঁর পরিবারের ১৮ জন মানুষ, আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এঁদেরকে খুন করার সময় তাঁর বুকটা একটু কাঁপেনি। আজ আমার যে ভাই শহীদ হয়েছে, যে বোন শহীদ হয়েছে, সেই শহীদ পরিবারের মা–বাবা, ভাই–বোনকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব?’
সারজিস আলম বলেন, ‘আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭৫ সালের গল্প বলে ক্ষমতাকে সব সময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা। এখন তিনি দুই হাজার মানুষকে কীভাবে খুন করলেন? তিনি যদি দরদ বোঝেন, তাহলে এ খুনগুলো কীভাবে করতে পারেন? সবার কথা এখানে বলতে পারছি না। কিন্তু সবার আলাদা কষ্ট-ব্যথা আছে, এগুলো বলার মতো না। আবার সবাই বলতেও পারেন না, সবাই প্রকাশ করতে পারেন না। যার চলে গেছে, সে-ই বোঝে, আমরা অনেক কিছু করতে পারি, অর্থ সহযোগিতা করতে পারি, চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি, সম্মানী ভাতা দিতে পারি; কিন্তু চিরতরে হারিয়ে যাওয়া ওই মানুষটাকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এই ক্ষত কোনো দিনও পূরণ করা সম্ভব না।’
‘খুনি হাসিনা ও তাঁদের দোসরদের এর জবাব দিতে হবে’ উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘ইশরাত-আবদুল্লাহ-সামিউলরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? কাদের কোলে বাবা বলে উঠবে? কারা দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাবার মতো করে সারা জীবন আগলে ধরে রাখবে? শিশুসন্তানেরা তার শহীদ বাবার রক্তাক্ত ভিডিওগুলো দেখছে, কিন্তু এই বয়সে তাদের কি এগুলো দেখার কথা ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর তাঁদের দিতে হবে।’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বরিশাল বিভাগের ৭৯ জন শহীদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ তথ্য উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে “শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ” কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে আমরা পাঁচ লাখ টাকা করে চেক দিচ্ছি। এটা মাত্র শুরু, কেউ যেন মনে না করে এটাই শেষ। তাঁদের যত দিন যা কিছু প্রয়োজন, সেই যৌক্তিক চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সেটা শুধু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে নয়, সেটা শহীদ পরিবারের একজনকে চাকরি দিয়ে হোক, তাঁদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে হোক কিংবা সম্মানীর ব্যবস্থা করে হোক।’ সারজিস বলেন, ‘এর আগে তিনটি বিভাগে এই অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ বিভাগ হিসেবে আজ আমরা বরিশালে এসেছি। এই সহায়তা নিছক অর্থ নয়, এটা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। আমাদের প্রত্যেক শহীদ পরিবারের বাড়িতে যাওয়া উচিত। তবে সেটা করতে অনেক সময় প্রয়োজন হওয়ায় আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা তাঁদের কাছে যাব, তাঁদের পাশে থাকব।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান।