ফরিদপুর আ.লীগের ঘোষণায় রাসেলস ভাইপার নিয়ে বিপাকে বন বিভাগ, কী বলছেন নেতারা

ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় আটক রাসেলস ভাইপার নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক রেজাউল খান। শনিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক।

২০ জুন এ ঘোষণার পর সমালোচনা হওয়ায় ২১ জুন জেলা আওয়ামী লীগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘নিজে সুরক্ষিত থেকে জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে বন বিভাগে জমা দেওয়া হলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের এ ঘোষণাও ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। এরপর রাসেলস ভাইপার জীবিত ধরার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনটি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা জমা দেওয়া হয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, বন্য প্রাণী জমা নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফোন করে ধরা সাপ জমা রাখার নির্দেশ দিলে তিনি তা জমা রাখেন। যে সাপ তিনটি জমা পড়েছে, তা বাচ্চা। কোনোটিই এক ফুট থেকে দেড় ফুট দৈর্ঘ্যের বেশি নয়। পুরস্কারের আশায় ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ও অম্বিকাপুর ইউনিয়ন থেকে সাপ তিনটি ধরা হয়।

সাইদুর রহমান আরও বলেন, জীবিত সাপ জমা দেওয়া হয়েছে—এ মর্মে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক প্রত্যয়নপত্র চাওয়ায় যাঁরা সাপ জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যয়নপত্র দিতে হয়েছে। সাপের বাচ্চাগুলো কাচের বয়ামে, প্লাস্টিকের পাত্রে কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

আজ রোববার বেলা একটার দিকে শহরের কমলাপুর মহল্লায় অবস্থিত বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কথা হয় ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের রেজাউল করিমের (৩৯) সঙ্গে। তিনি জমা দিতে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে করে দেড় ফুট দৈর্ঘ্যের একটি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফরিদপুরের নেতা ইশতিয়াক আরিফ (শাহ মো. ইশতিয়াক) সাহেব ঘোষণা দিয়েছিলেন যে জীবিত সাপ ধরে আনতে পারবে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এ জন্য আমি জীবনের রিস্ক নিয়ে সাপটি ধরে আনি। টাকার কথা শুইনা এ রিস্ক নিচ্ছি।’

ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৬ (১) অনুযায়ী সরীসৃপজাতীয় প্রাণী ধরার কোনো বিধান নেই। আমাদের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেওয়ার বিধান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতির কথায় প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে হয়েছে। এ তিনটি সাপ কোথায় অবমুক্ত করা হবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষণা প্রত্যাহার না করা হলে বিপদ বাড়বে। কেননা, সাপ বা সাপের বাচ্চা সবার দাতেই বিষ আছে, যার কামড়ে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, ‘আমাদের ঘোষণায় সাপ ধরার ঘটনা ঘটছে। বন বিভাগ বলেছে, সাপ ধরার বিধান আইনবহির্ভূত। আমরা দ্রুত আমাদের পুরস্কার–সম্পর্কিত এ ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, আজকের (রোববার) মধ্যে টাকা পুরস্কারের এ ঘোষণা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ সাপ থেকে সতর্ক ও নিরাপদ থাকার জন্য নতুন করে সবার প্রতি আহ্বানসংবলিত ঘোষণা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন