খেতেই বেশি দামে আলু বিক্রি
গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর দাম সর্বোচ্চ ১৩ টাকা ছিল, আর উৎপাদন ব্যয় ছিল ১২ টাকা। কৃষকেরা এক টাকা লাভে আলু বিক্রি করলেও মৌসুমের শেষে হিমাগার পর্যায়ে সেই আলু বিক্রি করে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুটেছে কেজিপ্রতি প্রায় ৪২ টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে খেতেই প্রতি কেজি আলু ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ বাদে লাভ থাকছে প্রায় ১১ টাকা।
এভাবে খেতেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় হিমাগারগুলোর আলু সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এতে মৌসুমের শেষে বাজারে আলুর দাম আবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
তারাগঞ্জ উপজেলার ছুট মেনানগর গ্রামের আলুচাষি আজাহারুল ইসলাম দোলাপাড়ার মাঠে এবার তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলু তোলার পর ২৬ টাকা দরে মাঠেই বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর কেজিপ্রতি লাভ হয়েছে ১১টাকা।
আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ১২ টাকা উৎপাদন খরচ পড়ছে, আলু বেচাছি ১৩ টাকাত। সেই আলু ৫৫ টাকা শেষোত বিক্রি হইছে। হামার লাভ না থাকলেও ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার মালিক হইছে। কিন্তু এবার আলুত ১৫ টাকার বেশি খরচ পড়ছে। শুরুতেই ২৬ টাকা কেজি দর উঠছে। ওই জন্য জমিতে আলু বেঁচে আবাদের টাকা তুলি নিছু।’
মৌসুমের শুরুতে মাঠপর্যায়ে আলুর উচ্চমূল্য থাকায় আজাহারুল ইসলামের মতো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের হাজারো আলুচাষি প্রত্যাশ্যার চেয়ে বেশি লাভ করছেন। তবে কেউ কেউ আরও বেশি লাভের আশায় আলু রাখছেন হিমাগারে। কেউ কেউ নিজ বাড়িতেও আলু সংরক্ষণ করছেন।
তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার তারাগঞ্জে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৬ মেট্রিক টন। বদরগঞ্জে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এই উপজেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন।
তারাগঞ্জের জগদীশপুর মাঠে শ্রমিক নিয়ে আলু তুলতে ব্যস্ত ওই গ্রামের কৃষক সাইদুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভাই, জন্মের বয়সে খ্যাতোত আলু ২৬-২৭ টাকা ওঠে নাই, এইবার উঠছে। এ্যালায় যদি এত দাম হয়, দুই–এক মাস পরে আরও কত দাম হইবে, ভাইবার পান? মুই এবার সউগ আলু স্টোরোত থুইম।’
তবে ভিন্ন কথা জানান বামনদীঘির কৃষক মোস্তফা মিয়া। তিনি সব আলু মাঠেই বিক্রি করবেন। কারণ, গত বছর বেশি দামের আশায় আলু হিমাগারে রাখায় তাঁকে জরিমানা গুনতে হয়েছিল।
বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘এবার আলু সোনা হয়া গেইছে। জমিতে ২৫-২৬ টাকা নগদ গনি দেওছে। পাইকার পেছনোত ঘুরোছে, হিমাগারের লোকজন আগাম লোন, বস্তা দেওছে। চিন্তা করছি, এবার আলু হিমাগারেই রাখব। গত বছরের মতো এবারও যদি ৫০ টাকা কেজি ওঠে।’
মাঠপর্যায়ে আলুর দাম বেশি থাকায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার কর্তৃপক্ষ কৃষকদের এবার ঋণ দিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত করেছে হিমাগারের প্রতিনিধি (এজেন্ট)। হিমাগার কর্তৃপক্ষ কৃষকদের বাকিতে বস্তাও সরবরাহ করছে।
সিনহা হিমাগারের প্রতিনিধি কাল্টু মিয়া বলেন, ‘হিমাগারের এজেন্টদের নির্দিষ্ট কোড আছে। কৃষকেরা সেই কোডে আলু রাখলে বস্তাপ্রতি আমরা কমিশন পাই। এ জন্য কৃষকদের বাকিতে আলু তোলার সময় বস্তা সরবরাহ করছি, ঋণ দিচ্ছি। এতে কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছে, আমরাও কিছু আয় করছি।’