কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত দফা দাবিতে শিক্ষক সমিতির ক্লাস বর্জন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছিল প্রশাসন। কিন্তু সভায় ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনার বদলে পাঁচটি অনুষদে ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য। ‘নজিরবিহীনভাবে’ অ্যাজেন্ডা (আলোচ্যসূচি) বদলে ডিন নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকেরা।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অনলাইনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, সভার অ্যাজেন্ডা ছিল উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা। ওই সভায় পাঁচজন ডিন নিয়োগ ও ডিন ক্যাটাগরিতে দুজন সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সভায় ১৬ জন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১১ জন অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কয়েক দিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। উপাচার্য কোনো দাবিই মানছেন না অভিযোগ করে গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) থেকে দুই দিনের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে ১৮ মার্চের মধ্যে দাবি না মানলে ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত টানা ক্লাস বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা দেন সমিতির নেতারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সিন্ডিকেট সভা হয়।
সভায় অংশ নেওয়া সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভার শুরুতে সভাপতি উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। শিক্ষকেরা তাঁর সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেন, তা তুলে ধরেন। পরে তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের ডিনের মেয়াদ ১৩ মার্চ (বুধবার) শেষ হয়। এ অবস্থায় নতুন করে পাঁচজন ডিন নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ডিন ক্যাটাগরি থেকে সিন্ডিকেট সদস্য নেওয়া হবে। তখন সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ডিন নিয়োগ দেওয়া যায় না। এটা নিয়ম মোতাবেক হবে না। অ্যাজেন্ডা উদ্ভূত পরিস্থিতি। আমরা সেটা নিয়ে কথা বলি।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে সায় দিয়ে বক্তব্য দেন সিন্ডিকেট সদস্য ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নিজামুল করিম।
জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষকদের সাত দফা দাবির মধ্যে একটি ছিল ডিন নিয়োগ। আমরা সেটা করতে পারি।’ এ সময়ে সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, যদি ডিন নিয়োগ দিতে চান, তাহলে সভার অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করতে হবে। এরপর উপাচার্য অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করে ডিন নিয়োগ দেন।
সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ দেবনাথকে বিজ্ঞান অনুষদে, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বনানী বিশ্বাসকে কলা অনুষদে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুর রহমানকে প্রকৌশল অনুষদে এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ আহসান উল্যাহকে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়। ডিন ক্যাটাগরি থেকে মুহম্মদ আহসান উল্যাহ ও মো. সাইফুর রহমানকে সিন্ডিকেট সদস্য করা হয়।
এ বিষয়ে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাজেন্ডা ছিল এক, হয়ে গেল আরেক। এটা নিয়ে কথা বলেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি বলেন, ‘জরুরি সিন্ডিকেট সভা সাধারণত বিরাজমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে হয়। উপাচার্য উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সভা ডেকে ডিন নিয়োগের সভা করলেন। এটা হলো? এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন হুটহাট করে অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন, সিন্ডিকেটের সভার কার্যবিবরণীও পরিবর্তন হয়ে যায়। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলে না।’
এদিকে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির ডাকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ছিল। সেটি পালিত হয়েছে।