এক্সপ্রেসওয়েতে বাসটির দ্রুতগতির কারণ কী, চালকেরা কোথায়—জানা যায়নি ২৪ ঘণ্টায়ও
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ছয় আরোহীর মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি। এমনকি কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটিও জানা যায়নি। দুর্ঘটনা ঘটানো বাসের চালক ও সহকারীর হদিসও পায়নি পুলিশ।
আজ শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানায় খবর নিলে এমনটাই জানায় পুলিশ।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটি আমাদের থানায় আছে। ঘটনাটি কেন ঘটেছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। বাসের চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। শনাক্ত হলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা নেওয়া হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে দেয় বেপারী পরিবহনের একটি বাস। এতে প্রাইভেট কারে থাকা একই পরিবারের চারজন ও মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চারজন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেট কারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪০), তাঁর বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তাঁর ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।
এ ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন প্রাইভেট কারের মালিক নুর আলম (৪২), তাঁর বোন ফাহমিদা আক্তার (১৭), প্রাইভেট কারের চালক হাবিবুর রহমান (৩৮) ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া (৪২)।
টোল প্লাজার সিসিটিভিতে দুর্ঘটনার ভিডিওটি ধরা পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, ধলেশ্বরী টোল প্লাজার মাওয়ামুখী লেনে একটি মোটরসাইকেল টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। এর পেছনে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় আরও একটি প্রাইভেট কার। অল্প কিছুক্ষণ পরেই বেপরোয়া গতিতে বেপারী পরিবহনের একটি বাস দ্রুত টোল প্লাজার দিকে আসতে থাকে। টোল প্লাজার সামনে এলে বাসের গতি আরও বেড়ে যায়। এ সময় বাসটি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলকে দুমড়েমুচড়ে টোল প্লাজার বাইরে নিয়ে যায়।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। পরিকল্পিতও হতে পারে, আবার না–ও হতে পারে। তাঁরা বলেছেন, যদি পরিকল্পিত না হয়, বাসটি যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকে, তাহলে যাত্রীদের বাঁচাতে টোল প্লাজার অন্য কোথাও আঘাত করতে পারত। বাসের গতিও স্বাভাবিক থাকত। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন তাঁরা।
গতকাল দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় আহত ব্যক্তিদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ দুর্ঘটনায় ১০ জনকে এ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত রেশমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছিল। পরে তাঁরা জানতে পারেন, গতকাল বিকেলে সেখানে রেশমার মৃত্যু হয়েছে।