কৃষ্ণচূড়ার লালে ছেয়ে গেছে কুমিল্লার পথঘাট
গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে জনজীবন অতিষ্ঠ। চারদিক যেন নিষ্প্রাণ। তবে এর মধ্যেই সবুজ পাতার ডগায় উজ্জ্বল লাল ফুল কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিতে এনেছে ভিন্ন আমেজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে দুই ধারে ক্ষণে ক্ষণে দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের। এর বাইরে কুমিল্লার শহর থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার মেঠো পথের দুই ধারে এখন শোভা পাচ্ছে লাল এই ফুল।
প্রকৃতির এই রূপ নিসর্গপ্রেমীদের দারুণভাবে মোহিত করছে। বাহারি এ ফুলের আগুন লাগানো সৌন্দর্য প্রকৃতিতে এনেছে উচ্ছলতা। কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীর কণ্ঠেও কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণনা আছে নানাভাবে। কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি পথিকের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। কুমিল্লার একেকটি এলাকা এখন কৃষ্ণচূড়ার রঙে আচ্ছাদিত।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে কুমিল্লা নগর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগর ভবনের সামনে, পুলিশ লাইন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নগর উদ্যান, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, প্রেসক্লাব, জেলা পুলিশ সুপারের বাংলো, রাণীরদিঘির পাড়, নতুন চৌধুরী পাড়া, অশোকতলা খান বাড়ি ও নগরের রাজগঞ্জ রাজবাড়ি এলাকায় গাছে গাছে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। এর বাইরে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির (রণসমাধিক্ষেত্র) ভেতরেও গাছে গাছে ফুটে আছে ফুল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, জেলার বুড়িচং উপজেলার সাহেববাজার, কংসনগর, দেবীদ্বার, মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ, নগরপাড়, বাঙ্গরা বাজার ও দৌলতপুরের পথে–প্রান্তরে দেখা মিলেছে কৃষ্ণচূড়ার।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়া মধ্যম আকৃতির পত্রঝরা বৃক্ষ। বীজ থেকে এর চারা হয়। বাংলাদেশে এই গাছকে কৃষ্ণচূড়া বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এটি ‘গুলমোহর’ নামেও পরিচিত। এর আদিনিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার দ্বীপে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সর্বত্র এ গাছ রয়েছে। কৃষ্ণচূড়াগাছে প্রজাতিভেদে ফুল ফোটে। দেখা যায়, অনেক বড় গাছে ফুল ফোটে না। আবার ছোট গাছে ফুল ফোটে। শীর্ষ মঞ্জরিতে ফুল হয়। সাধারণত মার্চের শেষ সপ্তাহে এ ফুল ফোটে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসজুড়ে ফুলের শোভা দেখা যায়।
কবি, শিল্পীদের কণ্ঠেও কৃষ্ণচূড়ার বয়ান আছে। উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগতশিল্পী কিশোর কুমারের বিখ্যাত গান, ‘এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার তলে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে...।’ অথবা ‘কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে...’ এমন গানও আছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও কৃষ্ণচূড়া নিয়ে লিখেছেন, ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/ আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল এই গরমে প্রকৃতিকে ভিন্ন সাজে সাজিয়েছে। এর রূপ সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষকে মুগ্ধ করে। সবুজের মধ্যে রক্তাক্ত লাল ফুল মন ভালো করে দেয়। কুমিল্লা নগরের পথে–প্রান্তরে এবার অসংখ্য কৃষ্ণচূড়াগাছে ফুল এসেছে। কড়া রোদে অথবা বৃষ্টির পর রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে এ ফুল আরও রূপ মেলে ধরে।