বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন সুজন মিয়া। দাওয়াত শেষ করে আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তবে আর ঢাকায় ফিরতে পারেননি। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁরা চারজনই মারা গেছেন।
সোমবার বিকেলে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টের ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ঢাকাগামী এগারোসিন্ধুর ট্রেনটিকে মালবাহী একটি ট্রেন ধাক্কা দেয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ১৮ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে সুজন মিয়া (৩৫), তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০), বড় ছেলে সজিব মিয়া (১৪) ও ছোট ছেলে ইসমাইল মিয়ার (১০) পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ট্রেনে সুজনের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই স্বপন মিয়া ও ভাবি রেশমা বেগমও ছিলেন। তবে তাঁরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুজন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা। সুজন ডাব বিক্রি করেন। পরিবার নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকতেন তিনি। ১৯ অক্টোবর রাতে বড় ভাই মিজানের ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলে যান সুজন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। বেলা পৌনে একটার দিকে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে স্ত্রী, দুই সন্তান, বড় ভাই ও ভাবিকে নিয়ে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সুজন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহতের ভাই স্বপন, মিজানসহ অন্য স্বজনেরা আহাজারি করছিলেন। স্বপন বলেন, ‘আমরা ট্রেনে ছিলাম। হঠাৎ ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হলে আমরা এদিক-সেদিক ছুটে পড়ি। পরে কোনোমতে ট্রেন থেকে বের হই। কিন্তু সুজন ও তার পরিবারকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে বড় ভাই মিজান এসে সুজন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ শনাক্ত করে।’
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। আর যাত্রীবাহী এগারোসিন্ধুর ট্রেনটি যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকার দিকে। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।